অন্তিম পর্ব
![]() |
অপরাহ্নে অপরিচিত |
“হুম…..!”, পিছন থেকে গলা ঝাড়ার আওয়াজে বাস্তবে ফিরে এলাম। জানি এই গলার সুরের অধিকারিণী কে? আমি পিছন না ঘুরে বাইরে জানালার ফাঁকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। পিছনের সুর আবার নীরবতা ভঙ্গ করে বললো, “কি ব্যাপার মেমসাহেব একা একা কি ভাবা হচ্ছে!”, তারপর দুটি হাত আমাকে পিছন থেকে আলিঙ্গন করলো। আমি বললাম, “কি করে জানলে আমি কিছু ভাবছি?”
শ্রুতি তার থুতনিটা আমার কাঁধে রেখে বললো, “কারণ আমি দু মিনিট হলো আমি দাঁড়িয়ে আছি, তুমি বুঝতেই পারনি!”
“ওহ”
“কি ভাবছিলে?”
“ভাবছিলাম আমাদের শেষ পরিণতি কি হবে? কখনো মনে হয় আমি তুমি একটা উপন্যাসের কাহানী বিশেষ লেখক তার অবসন্ন সময় কাটাতে তোমাকে আমাকে সৃষ্টি করেছে, আর যদি সৃষ্টি করেই থাকেন তাহলে আর বাকিদের মতো কেনো করলো না? এ জীবন যে বড়ো ব্যাথার, প্রত্যেক মোড়ে যে শুধুই বাধা”। নিজের অজান্তেই চোখের কোণে ঝিলিক করে জল চকচক করে উঠলো, এক ফোঁটা গড়িয়ে শ্রুতির হাতের উপর পড়লো।
শ্রুতি আমাকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে চোখের কোণে জল মুছিয়ে কপালে স্নেহের পরশ দিয়ে বললো, “তাকাও আমার দিকে”।
আমি আস্তে আস্তে ওর চোখের দিকে তাকালাম, ওর কালো ঘন চোখের মধ্যে নিজেকে যেনো অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একা আমি, মনে হলো ওর চোখের পিছনে বসে আমার গল্পের লেখক তার গল্পের নায়িকাকে আজ অসহায় করে বেশ তৃপ্ত হচ্ছেন। “তুমি এত নিষ্ঠুর কেনো লেখক?” জানি এর কোনো উত্তর পাবো না বাস্তব জীবন কি আর কলমের কালিতে চলে!
শ্রুতি বললো, “আমাদের প্রেম দু বছরের পূর্ণতা পেয়েছে, আমরা কতো বাধায় না পেরিয়ে এসেছি, বাকি গুলোও তোমার হাত ধরে ঠিক টপকে যাবো”।
“যদি বলি হাত আমাকে ছাড়তে হবে তখন!”
“তুমি ছাড়লেই হলো আমি তো তোমাকে যেতে দিলে তো, মনে আছে প্রথম দিনের কথা?”
“সবই মনে আছে শ্রুতি তোমার এক – একটা কথা আমার বুকে গেঁথে আছে কিন্তু আমি নিরূপায়!”
এবার শ্রুতি কিছুটা অবাক হয়ে ভ্রুকুটি করে বললো, “নিরূপায়! কি হয়েছে খুলে বলবে কি?”
আমি নরম সুরে বললাম, “আমার বিয়ে ঠিক করেছেন বাবা, শ্রুতি!” চোখ বন্ধ করতেই আর চেপে রাখতে পারলাম দু চোখে যেনো চন্দ্রিমার আকর্ষণে জোয়ার দেখা দিলো।
শ্রুতি আমার চোখের জল মুছে বললো, “ধুস! পাগলী এর জন্য কান্না করে নাকি, এটা তো একটা সামান্য ব্যাপার, এর থেকে কতো জটিল ব্যাপার আমরা সমাধান করেছি। মনে নেই তোমার চাকরির বেলায় কতো ঝামেলা করতে হয়েছিল এইটা তো তার কাছে কিছুই নয়, দেখবে ঠিক হয়ে যাবে”।
“আর যদি না ঠিক হয় তখন”।
“তুমি ভগবানে বিশ্বাস করো?”
“না করিনা কিন্তু তোমায় বিশ্বাস করি শ্রুতি, তুমি আমার ভগবান, আমি রোজ তোমাকেই পুজো করি”
“তুমি তোমার ভগবানের উপর বিশ্বাস রাখো সে ঠিক উদ্ধার করবে”।
“আমি বাবাকে বললাম আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না এই চাকরি পেয়েছি , এখনই চাকরি হাত ছাড়া করতে চাইনা, তারপর আমি চলে তোমাদের দেখবে কে, আর এখনো শ্রুতির চাকরি হয়নি ওর এই সামনে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশের পরীক্ষা, ওর পরীক্ষা হোক তারপর না হয় বিয়ের কথা ভাববো, তখন বাবা কি বললো জানো?”
“কি?”
“বাবা বললো, আমি জানিনা ভাবছ তোমরা দুজনে কি করো, পাড়ায় কানাঘুসো সবই শুনতে পায় বুঝেছ, তুমি কি আমাদের সমাজে মুখ দেখাতে দিবে না? ওই অসভ্য মেয়েটার নাম মুখে আনলে জীব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। আমার দেখা ছেলে রমেশ কাকুর ভাইপো, বেশ পয়সাওয়ালা তোমাকে চাকরি করার প্রয়োজন হবে না, সামনের মঙ্গলবার দেখতে আসছে ওইদিন বিয়ের কথা পাকা হবে”।
“যদি আমি বিয়ে না করি! তখন বাবা আমার গালে চড় মেরে কি বললো জানো?”
“কি বললো বাবা?”, এবার শ্রুতির গলা মনে হলো অনেক দূর থেকে আসছে, বুঝতে পারলাম অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখেছে।
“বললো আমার মরা মুখ দেখবে! বলো এরপর আমি কি করবো”
শ্রুতি আমাকে ছেড়ে দিয়ে খাটের ধারে গিয়ে বসলো। আমি ওর সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে মেঝেতে বসলাম, ওর হাঁটুতে হাত রাখতে ও আমার দিকে তাকালো তারপর গালে হাত রেখে বললো, “তুমি তোমার ভগবানকেও অসহায় করে দিলে পায়েল, চলো না আমরা কোথাও পালিয়ে যায় যেখানে কেউ আমাদের এই মানুষের তৈরি অভেদ্য যাঁতাকলে পিষে মারবে না”
“বলতে পারো এরকম জায়গা কোথাও আছে বাস্তবে যেখানে আমরা নকল বিচারের উর্ধ্বে। তাছাড়া আমার মা বাবার উপর একটা দায়িত্ব আছে যেটা আমাকে পালিয়েও শান্তিতে থাকতে দিবেনা”।
“তাহলে কি চাও তুমি?”, বেশ দৃঢ় গলায় বললো শ্রুতি।
আমি শ্রুতির হাঁটুতে মাথা রেখে বললাম, “যেটুকু তোমাকে এখনো দিয়নি, আমি অনেক আগেই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি নিতে চাওনি”
শ্রুতি আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, “না ওটার আর প্রয়োজন হবে না, ওটা আমাদের ভালোবাসার চূড়ান্ত স্বীকৃতির স্বরূপ যত্ন করে রেখেছিলাম, যখন আমাদের পবিত্র ভালোবাসা পূর্ণ হবেনা তখন আর দরকার কি?”
আমার চোখ থেকে জলের ফোঁটা বেরিয়ে শ্রুতির প্যান্টটা সামান্য ভিজে গেলো। আজ নিজের উপর গর্ব হলো জীবনে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিন্তু অনেক পূণ্য করলে শ্রুতির মত জীবন সঙ্গী পাওয়া যায়।
আমি চোখের জল মুছে বললাম, “না শ্রুতি তা বললে চলে না, আমি আমার সবটুকু দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দাওনা তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না, এমনি অর্ধেক মরে গেছি বাকিটাও শেষ হয়ে যাবে, বলো শ্রুতি আমার শেষ ইচ্ছা পূরণ করবে কিনা?”
শ্রুতি নিরূপায় হয়ে বললো, “ঠিক আছে তুমি যা চাও আমি তাই করবো”
শ্রুতি আস্তে আস্তে আমার হাত ধরে খাটে বসলো, তারপর আমার কপালে চোখে গালে চুমু খেতে লাগলো যেনো চাই আমার প্রতিটা দুঃখ চুমু দিয়ে ধুয়ে দিতে, তারপর ঠোঁটে চুম্বন দিলো। আজ কোনো স্বাদ পেলাম না যেনো বিস্বাদে ভরা। আমি প্রতি চুম্বনে শ্রুতিকে শেষ বারের মতো পাওয়ার সবটুকু চেষ্টা করলাম। তারপর শ্রুতি আমাকে আস্তে আস্তে বিছানায় শুয়ে দিলো। এক এক করে শরীরে প্রত্যেকটা কাপড় খুলে পড়ল আমার দেহ থেকে তারা যেনো এই অপেক্ষায় ছিল। শ্রুতি আমার অর্ধেক নগ্ন শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকলো হঠাৎ একটা কিসের ফোঁটা যেনো আমার বুকের উপর পড়লো। বুঝতে পারলাম শ্রুতি কাঁদছে। আমি ওর চোখের জল মুছিয়ে ওর ডান হাতটা নিয়ে আমার স্তনের উপর বসিয়ে দিলাম। ও আমার ডানদিকের স্তন টিপে ধরলো হাতের তালুর মধ্যে, একটা স্বস্তির চিৎকার আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো। শ্রুতি ঝুকে আমার ঠোঁটে চুম্বন দিতে থাকলো। তারপর শ্রুতি আমার সারা শরীরে চুম্বন দিতে দিতে নিচের দিকে ক্রমশ এগোতে লাগলো, এক ঝটকায় আমার প্যান্ট টেনে খুলে ফেললো শ্রুতি। কিছুক্ষণ পর দুপায়ের মাঝে একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম ঠোঁট কামড়ে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না, শ্রুতির বীরত্বের কাছে পরাজিত হয়ে চিৎকার করে উঠলাম। সাথে চোখের কোন দিয়ে জল বেরিয়ে বালিশটাকে ভিজিয়ে দিলো। আর একটা তৃপ্তির হাসি মুখে ফুটে উঠলো আমার।
না আর দেরি না এবার যাওয়ার সময় হয়েছে। আর কিছুক্ষণ থাকলে শ্রুতির মোহ আমাকে যেতে দিবে না। এই শরীর শুধু শ্রুতির জন্যই বাঁচিয়ে রাখা ওকেই যদি আমাকে হারাতেই হয় তাহলে আমি বাঁচবো কি নিয়ে, তাই আর দেরি না করে পাশের টেবিলে রাখা পটাসিয়াম সায়ানাইড এর আম্পুলটা দিলাম মুখে পুরে, শ্রুতির অলক্ষ্যে। কয়েক সেকেন্ড বেশ সব অন্ধকার……………..।
পায়েল চলে গেলো শ্রুতিকে একা রেখে, কিন্তু এরপর শ্রুতির কি হবে সেটা কি একবারও ভাবেনি পায়েল। ভালোবাসায় কতজন প্রেমের আহুতি আর কতজন নিজের আহুতি দেয় তার হিসাব কেই বা রাখে। পায়েল আর শ্রুতিকে কিন্তু আইন শাস্তি দেইনি। দিয়েছিল সমাজ। সমাজের মূল্যবোধ বিশ্লেষণ করা আমার মতো সাধারণ মানুষের মতো কাজ নয়। কিন্তু পারি পায়েলের বাবার মতো বাবা না হতে। বেশ এইটুকুই ওরা চাই, চাই বাঁচতে আমাদের মতো করে ওরা। থাকবে নিজেদের ছোট্ট পরিবার থাকবে ছোট্ট পায়েল, ছোট্ট শ্রুতি, ছোট্ট আমি, তুমি…….. নিজেই ভেবে দেখুন। আজ চলি দেখা হবে আবার কোনো এক ব্যাথার শহরে নিয়ে যেতে……..
……….
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন