অপরাহ্নে অপরিচিত ![]() |
অপরাহ্নে অপরিচিত |
আমি চিরকুটটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক উল্টাতে লাগলাম। না! আর কোনো কিছু লেখা নেই শুধু ওইটুকুই। আমি অনেক্ষণ চুপ করে বসে
থাকলাম। নিজের মনে প্রশ্নের পাহাড় জমতে শুরু করেছে। এটা ঠিক কিনা? মেয়ে
হয়ে আর একটা মেয়েকে ভালোবাসা যায়? হয়তো যায়, আমি মানসিক না! আমি ব্যাতিক্রমী হতেই পারি। আমার স্বপ্নের রাজকুমারকে, রাজকুমার হতেই হবে? রাজকুমারী হলেই ক্ষতি কি?
আমি চিরকুটটা ভাঁজ করে তালুর মধ্যে রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। হাত ঘড়িতে দেখলাম বিকাল প্রায় সাড়ে পাঁচটা, হাঁটা দিলাম শ্রুতি বাড়ির দিকে। প্রায় মিনিট পনেরো লাগলো
শ্রুতি বাড়ি পৌঁছতে। একবার, দুবার, তিনবার কলিং বেল চাপার
পর শ্রুতি দরজা খুলে দাঁড়ালো, চোখ লাল হয়ে আছে, মাসকারা চোখের কোনে ঘাটা হয়ে শ্রুতিকে আরো অপ্সরী করে তুলেছে!
আমি বললাম, “কি ব্যাপার আমাকে ফেলে রেখে চলে এলে যে?”
ও কিছু বললো না, শুধু কপাটের একটা পাল্লা ধরে আগের মতোই মূর্তির
দাঁড়িয়ে রইলো।
আমি আবার বললাম, “আমার কি বাড়ির ভিতরেও আসা বারণ?”
শ্রুতি ধরা গলায় বললো, “আসো”, বলে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। আমি সোজা সোফায় গিয়ে বসলাম। শ্রুতি আমার
সামনে এসে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি ওর হাত টেনে সোফায় বসালাম, তারপর
বললাম, “কাঁদছিলে নাকি?”
ও কিছুই বললো না মাথা নীচু করে বসে রইলো।
আমি আবার বললাম, “কি হলো তাকাও আমার দিকে”
তাও তাকালো না আমার দিকে।
আমি আবার বললাম, “এই ভালোবাসো আমাকে তুমি, আমার মুখের দিকে
তাকাতেই পারছ না”।
এবার ওষুধে কাজ হলো সে এবার আস্তে আস্তে আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো। “দেখেছি তার কালো হরিণ
চোখ” কোনো একটা গানের লাইন ছিলো মনে পড়ছে না কিন্তু এখন মনে হলো এই সেই কালো হরিণ
চোখ যার মধ্যে খুঁজে পায় নিজেকে, আমিও শ্রুতির প্রেমে পড়েছি একই সুতোয়, যে সুতোর বাঁধন কোনোদিনও চাইবো না খুলতে।
কিছু বলার জন্য চেষ্টা করলো শ্রুতি, কিন্তু গোলাপের মতো মসৃণ ঠোঁট
দুটো একবার তিরতির করে কেঁপে উঠে থেমে গেল। তারপর আবার ঠোঁটের মৃদু কম্পন
শুরু হলো –
“তুমি আমার উপর রেগে নাও?”
“কেনো রাগ করবো?”
“আমি তোমাকে খারাপ চোখে দেখেছি, এটা একদম ঠিক না, আমি একটা অসভ্য নরকের
কীট!”, বলে দুহাতে মুখ ঢেকে কান্না করতে লাগলো বাচ্চা মেয়ের মতো। আমি ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললাম –
“তাকাও আমার দিকে”, এবারও না তাকাতে ধমক দিয়ে বললাম, “তাকাও আমার দিকে!”
শ্রুতি চকিতে আমার দিকে তাকালো, চোখে ভীত, অনুসুচনা, ছেলেমানুষী, আর অগাধ ভালোবাসা। সত্যিই আজ জানতে পারলাম যে কারো চোখ দেখেও ভালোবাসার
পরিমাপ করা যায়।
আমি খুব মৃদু সুরে ওর মুখের সামনে মুখ এনে বললাম, “কি খারাপ ভাবতে আমাকে
নিয়ে?”
শ্রুতির চোখ আস্তে আস্তে আমার মুখ থেকে আমার ঠোঁটের উপর আবদ্ধ হলো। ওর ইঙ্গিত পেয়ে
দিলাম, আমার ঠোঁট ওর ঠোঁটের সাথে মিশিয়ে। মনে মধ্যে যেন সাতরঙের রামধনু আকাশ হতে দেহ
মন রাঙিয়ে দিলো। একেই বলে সাত রঙের ভালোবাসা যা কোনোদিন কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
প্রথম চুম্বনের অনুভূতি যেনো সব মানুষের স্মৃতি হয়ে থাক শেষ জীবন অবধি। শ্রুতির
প্রতি চুম্বনের উত্তরে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম শ্রুতির কাছে। শ্রুতি আমার চুলের
মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বিলি কাটতে লাগলো। আমি আরো পাগল হয়ে উঠলাম শ্রুতির মধুর
স্পর্শে। প্রতিটা মুহূর্ত যেনো খুব অল্প মনে হতে লাগলো। শ্রুতির
হাত এবার আমার চুলের গোছা শক্ত করে ধরে পিছনের দিকে টেনে ধরলো। একটা আলতো চিৎকার
আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো, আর মনে হলো প্রত্যেকটা চুলের গোঁড়ায় যেনো বিদ্যুৎ খেলে
গেলো। আমার ঠোঁট শ্রুতির ঠোঁট থেকে আলাদা হয়ে গেল, শ্রুতি এক হাতে আমার চুলের
গোছা টেনে ধরে রইলো আর অন্য হাতে করে আমার ঠোঁটের উপর বুলাতে লাগলো। নিঃশ্বাসের
প্রখরতায় আমার বুক দ্রুত উঠানামা করতে লাগলো। আমি যেন শ্রুতির হাতে জল বিহীন
মাছের মতো ছটপট করতে লাগলাম। নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে আবার শ্রুতির ঠোঁটে উপর
নিজেকে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম শ্রুতি শক্ত করে আমার চুল ধরে থাকা সত্বেও।…….!
কিছুক্ষণ পর নিজেরা শান্ত হলে আমি শ্রুতির বুকে মাথা রেখে
শুয়ে রইলাম। আমার চুলে শ্রুতি বিলি কাটছে। যদি সময় এখানে থেমে যেত তাহলে! তাহলে
আমি সারা জীবন আমি পারবো শ্রুতির বুকে মাথা রাখতে। পারবো প্রত্যেকটা হৃদপিণ্ডের ছন্দে
সুর বাঁধতে। পারবো একটানা দেহের উত্থান পত্তন এর ধেও ভেসে বেড়াতে। কিন্তু সময়
বড়ো নিস্তুর সে কাহারো জন্য থেমে থাকে না।
শ্রুতি আমার এক গোছা চুলের ঘ্রাণ নিয়ে বললো, “চুল
তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, পায়েল তুমি হবে আমার হবে
বিদিশা, তুমি শুয়ে থাকবে বুকে আমি রবি ঠাকুর স্মরণে তোমার চুলের ঘ্রাণ নেবো”।
আমার হাসি পেলো, প্রেমে পড়লে কি মানুষ সত্যিই কি কবি হয়ে
যায়।
“কি ব্যাপার, হাসছো কেনো?”
আমি বললাম, “আমি তোমার সব বিদিশা, নিশা, পায়েল সব, তা বলে
মনের মধ্যে বিদিশা নিশা না যেন বাসা বাঁধে”।
“আরে পাগলী এই মনতো শুধু
তোমার এখন আর কোনোদিন অন্য কারো হবে, তুই ছুলি যখন এ মন হলো তোর! আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি
পায়েল, তুমি শুধু আমার”, আমার মাথায় চুমু খেয়ে বললো, শ্রুতি।
আমিও প্রতি উত্তরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে, “আমি
তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি শ্রুতি, আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না”
………. To be continued
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন