![]() |
অপরাহ্নে অপরিচিত |
দ্বিতীয় পর্ব
পরের দিন দুপুরে
নিয়মিত টিউশন পড়ানোর জন্য বের
হলাম। সেই অ্যাক্সিডেন্ট এর
জায়গাটাই যখন পৌঁছলাম তখন দেখি কালকের মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে! আমাকে হাত নেড়ে থামবার জন্য ইশারা করছে। আমি কুঞ্চিত ভ্রুকুটি করে সাইকেল থামালাম। সে এগিয়ে এসে সাইকেলের হ্যান্ডেল – এ হাত দিয়ে দাঁড়ালো।
আমি বিরক্তি সুরে
বললাম, “কি ব্যাপার পথ আটকালেন কেনো?”
সে সামনের দিকে
ঝুকে বললো, “কালকের চড়টা ফেরত দিতে!”
আমি চোখ গিলে মুখ
কাচুমাচু করে বললাম, “কি ব্যাপার! কি বলতে চান!”
“গান্ধীজি বলেছেন এক গালে চড়
খেলে আর একটা গাল বাড়িয়ে দিতে”, বলে তার বাঁদিকের
গালটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, “নাও চড় মারো!”
আমি তিতিবিরক্ত
হয়ে বললাম, “ভর – দুপুরে কি অসভ্যতা হচ্ছে এই সব!”
সে করুন সুরে
বললো, “আহা রাগ করছো কেনো! আমি শুধু তোমার দুটো কথা বলার জন্য এই ভর – দুপুরে দাঁড়িয়ে আছে। তা তোমার নাম কি জানতে পারি?”
আমি হাসি মুখ করে
বললাম, “তাই নাকি! কিন্তু আমার মা বলেছেন অপরিচিতাদের সাথে কথা কম
বলতে! আর আপনি তো অপরাহ্নে অপরিচিত। আপনাকে বলবো কেনো!”
সে হেঁসে বললো, “তাই শুধু কি অপরিচিতাদের নাকি অপরিচিতরাও আছে
এর মধ্যে!”
আমি বললাম, “ওটা স্থান কাল বিবেচনায় ব্যবহৃত, তাও যখন নাম জানতে চাইলেন, এই সর্মার নাম পায়েল”।
“ব্যাস, শুধু পায়েল আগে পরে কিছু নেই? আমার নামটা জানতে চাও না!”
আমি বললাম, “না আগে পরে কিছু নেই আর আপনার নাম জানার ইচ্ছে আমার
নেই! এবার পথ ছাড়ুন আমার টিউশন
পড়ানোর দেরি হয়ে যাচ্ছে”।
“ ওহ আমি পড়াতে যাচ্ছেন চলুন
না আপনাকে ছেড়ে দিয়ে আসি। আর নাম না জানতে চাইলেও
বলে রাখি আমার নাম শ্রুতি”।
নামটা শুনে কেমন যেনো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো বুঝতে পারলাম না। বললাম, “তা আর দরকার হবে না আমি চলে যাবো”।
গল্প হলেও সত্যি
সে বললো, “এসব বললে চলবে না ধরুন এটা চড় মারার উপহার”।
আমিও আর জোর করলাম
না। ভাবলাম দুপুরে সাইকেল করার
থেকে স্কুটিতে যাওয়ায় ভালো! বললাম, “ঠিক আছে চলুন কিন্তু আমার সাইকেল?”
সে বললো, “ওসব চিন্তা করতে হবেনা” বলে সামনে থাকা একটা গলি দেখিয়ে বললো, “ওই গলিটার সামনের বাড়িটা আমাদের, চলুন ওখানে সাইকেল
রাখবেন”।
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে তার পিছু পিছু চললাম। তার বাড়িতে সাইকেল এ তালা মেরে তার স্কুটির পিছনে চেপে বসলাম।
রাস্তায় দু – একটা কথা হলো জানতে পারলাম সে আমার থেকে দুবছরের বড়ো! সে থার্ড ইয়ারে পড়ে আর
আমি ফার্স্ট ইয়ারে। তাকে দুঃখ জানালাম ছোটো
হয়ে তার গায়ে হাত তোলার জন্যে। সে কিছু বললো না। শুধু একটা হাসি দিল। আমি রিয়ার ভিউ মিরর এ তার হাসি মুখখানা দেখতে লাগলাম। বেশ গোলাপী ঠোঁটের আভায়
আমার মুখ রক্তিম হয়ে উঠলো। আমি তার কারণ বুঝার অনুধাবন করলাম কিন্তু বুঝে উঠতে পারলাম
না। শ্রী কৃষ্ণের লীলা সবার বোঝা কাম্য নয়!
আমার পড়ানোর জায়গায় আসতে বড়জোর 5 মিনিট লাগলো। আমি নেমে গিয়ে তাকে চলে যেতে বললাম, কিন্তু সে নারাজ সে বললো আমার
পড়ানো শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আমি আর কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে গেলাম। পিছন ফিরে তাকালাম সে দেখি মোবাইল বের কিছু একটা করছে।
এভাবে এটা একটা রুটিন হয়ে গেলো
তার বাড়িতে সাইকেল রাখা তারপর টিউশন আসা, আপনি কখন তুমি হয়ে গেলো বুঝতেই
পারলাম না। তার স্বভাব কেমন যেনো আমার
ভীষন ভালো লাগতে লাগলো। শুধুই কি ভালো লাগা নাকি অন্য কিছু প্রশ্ন টা মনে উকি দিলো কিন্তু আমি জোর করে চাপা দিয়ে দিলাম।
এভাবে মাস খানেক কাটলো। একদিন সে আমাকে প্রশ্ন করল আমি কোনোদিন প্রেম করেছি কিনা, আমি অন্যমনস্কভাবে ভাবে উত্তর দিলাম, “না করিনি পড়াশোনার চাপে সময় দিইনি”।
“এখন সময় পেলে করবে?”
“তোমার মতো কাউকে পেলে করবো”।
“আমার মতো!”
আমি উত্তর দিতে গিয়ে আটকে গেলাম। মনের অজান্তেই আমার অন্তর থেকে
কথাটা বেরিয়ে এসেছিল। আর কিছু বলতে পারলাম না।
আর একদিন আমাকে বললো, “হাতে তো এখনো সময় আছে
চলো না জিরাট মাঠে যায়”,
বললাম, “চলো”,
কিছুক্ষণ এদিক ওদিকের কথা হচ্ছিলো, কিন্তু ওকে বার বার অন্যমনা হতে দেখছিলাম। আমি জিজ্ঞাসা
করলাম, “এই শ্রুতি কিছু হয়েছে কি? এরকম মনমরা হয়ে বসে আছো
কেনো?”
প্রায় মিনিট খানেক কোনো কথা বললো না আমি আমার দৃষ্টি ওর মুখের ওপর নিবিষ্ট রাখলাম। তারপর ও ওর পকেট থেকে একটা চিরকুট আমার হাতে ধরিয়ে হনহন করে মাঠের দরজা দিয়ে বেরিয়ে
স্কুটি নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে ওর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। তারপর আসতে আসতে চিরকুটটার ভাঁজ খুললাম।
লাল অক্ষরে লেখা আছে, “I love you, Payel”
………. To be continued
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন