সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালোলাগা ও ভালোবাসার পরে

ভালোলাগা ও ভালোবাসার পরে

ভালোলাগা ও ভালোবাসার পরে


দ্বিতীয় পর্ব
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলাম, পাশ ফিরে দেখি অনি নেই, নিচের রান্নাঘর থেকে টুংটাং আওয়াজে বুঝলাম, অনি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে। এমন সময় ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো, আন্দাজ করে ফেললাম কে হতে পারে, ফোনের লক খুলতে বুঝলাম আমার অনুমান একদম সঠিক, আমার লেখিকা –
“একই লাবণ্যময়ী সকাল, সঙ্গে শিশির ভেজা চুল, রূপকথার রাজ্যে মেয়েরা চলেছে কোমরে কলসি নিয়ে জল আনতে, সামনের দিগন্তে ওঠা রক্তিম সূর্য যেনো কানে কানে কি বলছে জানো – সুপ্রভাত”
লাইনটা পড়ে বেশ হাসি পেলো, আমি সাহিত্যের স্ ও বুঝিনা, শুধু সুপ্রভাত লিখে পাঠিয়ে দিলাম।
অনি খাবারের ট্রে নিয়ে প্রবেশ করলো রুমে, বাব্বা আমি কি ভুত দেখছি নাকি এত সুমতি হলো কীভাবে এক রাত্রের মধ্যে এত পরিবর্তন। আমি কিছু না বলছি দেখে অনি বললো,
“কি হলো, আমাকে দেখনি নাকি আগে”
“দেখেছি, কিন্তু এভাবে ঠিক কয়েক মাস আগে”
“ও তার মানে বলছো তুমি একাই ভালোবাসতে পারো, আমি পারিনা”
“তা তো কাল দেখতেই পেলাম, কতো ভালোবাসো এখনো গালটা লাল হয়ে আছে”, আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম।
অনি আমার গালে হাত রেখে বললো, “ চড়টা খুব জোরে লেগেছিলো বুঝি, দেখি”
আমি অনির হাত গাল থেকে সরিয়ে বললাম, “থাক আদিখ্যেতা আর দেখাতে হবে না”
“এই, সুমি দেখি”, বলে আমার গালটা শক্ত করে ধরে পরীক্ষা করতে লাগলো।
কিছুক্ষন, পর বললো, “sorry”, তারপর শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, ব্যাস আর রাগ করে থাকা যায়, আমিও জড়িয়ে ধরলাম।
চোখে জল ছলছলে নিয়ে বললাম, “তুমি কেনো এমন করো, আগের মতো কেনো ভালোবাসোনা আমায়, কি ভুল করেছি বলো? তুমি এরকম করো এতে কষ্ট হয়না বুঝি আমার”
অনি কিছু না বলে শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল, বুঝলাম মনের মধ্যে কিছু একটা বিদ্বেষ আছে।
আমি আবার বললাম, “যদি কিছু বলার থাকে আমাকে বলো, আমি সবসময় তোমার কথা শুনতে রাজি, প্রেমিকা হয়ে না দাঁড়াতে পারলেও, বন্ধু হয়ে সবসময় পাশে থাকবো তোমার”
তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, “সব ঠিক হয়ে যাবে, চলো খেয়ে নাও, নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে”।
“খাইয়ে দাও”
অনি মুচকি হেসে আমাকে খাওয়াতে লাগলো, এই মুহূর্ত টা আমার কাছে জীবনের সেরা মুহূর্ত মনে হলো, যেনো মন চাই, এই মুহুর্তেই সব কিছু আটকে যাক। প্রেমিকার হাতে খাওয়ার সৌভাগ্য আর কজনের আছে, সেটা মারই হোক অথবা খাবার।
কলেজে যাবার সময় অনি বললো, “চলো আজ একসাথে কলেজ যায়”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “বাব্বা, আজ তোমার কি হলো শরীর খারাপ নয় তো, এত রোমান্টিক কথা বলছো সেই পুরোনো দিনের মতো”
“কেনো সেই পুরোনো অনিকে ফিরে পেতে চাওনা”
আমি মনে মনে বেশ খুশি হলাম, আমাদের মধ্যে আবার সব ঠিক হয়ে আসছে, তবুও যেনো কিসের ভয় ঠিক লেগেই আছে।
অনির কালো রঙের স্কুটি পিছনে বসে আছি ও তীর বেগে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির দিকে, ওর কালো ঘন চুল বারবার উড়ে পড়ছে আমার মুখের উপর। মিষ্টি চুলের গন্ধ, যে কারো মন পাগল করার জন্য যথেষ্ট।
আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো আমি ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম, “অনি, I like it when you be rough with me, I like when you roughly pull my hair, pined down against wall”, বলে ওর কানের লতিতে ছোট্ট একটা চুমু দিলাম।
ও শিউরে উঠে নিজের ঠোঁট কামড় ধরলো তারপর বললো, “সুমি, বেশ ফাজিল হয়েছে, আমি স্কুটি চালাচ্ছি দেখতে পাচ্ছো না”
কলেজে পৌঁছে, নির্দিষ্ট স্থানে স্কুটি রেখে, আমাকে হেলমেট ধরিয়ে অনি, ওর নীল শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটাতে লাগলো, আমি শুধু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম এক মুখ হাসি নিয়ে। এতো বছরের পুরোনো প্রেম তবুও যেনো আমি অনির শার্টের হাতা গোটানো দেখে আমি আবার অনির প্রেমে পড়লাম। সেই প্রথম দিন আর আজকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কে বলে পুরোনো হলে প্রেম কমে যায়, কই আমি তো প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মুহূর্ত নতুন করে অনিকে ভালোবাসার রূপ খুঁজে পায়।
কবি বলেছেন
“দহনের দিনে, কিছু মেঘ কিনে যদি ভাসে মধ্য 
দুপুরত মেয়ে জানে, তার চোখ মানে কারো বুকের পদ্মপুকুর”
আমি অনেক্ষণ একই ভাবে তাকিয়ে আছি দেখে আমার গাল চিপে বলে, “কি দেখছো একই ভাবে, আমি কি দেখতে খারাপ”।
আমি হালকা হাসি মুখে এনে বললাম, “কে বললো তুমি খারাপ দেখতে, আমার দেখা তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শ্রেয়সী, তোমার কাছে হার আমার”।
“বাবা দিন দিন সাহিত্যিক হয়ে যাচ্ছো”
“প্রেমে পড়লে সবারই গুপ্ত সাহিত্যিক ভাব জেগে ওঠে তুমি জানোনা বুঝি”
“হয়েছে, চলো ক্লাসে নাহলে দেরি হয়ে যাবে”, বলে অনি আমার হাতটা তার হাতের মধ্যে নিয়ে এক প্রকার টানতে টানতে ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।
ওর আর আমার ডিপার্টমেন্ট আলাদা, আমাকে আমার ক্লাস রুমের নিয়ে এসে থামলো। তারপর আমার কিছু বলার আগেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, আমিও জড়িয়ে ধরলাম। আমার কানের কাছে মুখ কান্না জড়ানো গলায় বললো,
“সুমি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, আমাকে ভুল বুঝনা, আমাকে ছেড়ে যেও না, প্লিজ সুমি”।
আমি ওকে ছেড়ে ওর মুখ দুহাতের মধ্যে নিলাম, অনির চোখে দু এক ফোঁটা জল, আমি অনির চোখের জল মুছে বললাম, “এই অনি তাকাও আমার দিকে” অনি আস্তে আস্তে আমার দিকে চোখ রাখলো।
“অনি আমি তোমাকে কোনোদিনই ছেড়ে যাবো না, আর যদি তাই হতো তাহলে অনেকদিনই চলে যেতাম, আমি তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসি, বোকা মেয়ে”।
অনি কোনো কথা না বলে আমার হাত ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো, আমি হ্যাঁচকা টান দিতে অনি ফিরে এসে আমার ওপরে পড়লো। আমি বললাম,
“কোথায় যাচ্ছো দাঁড়াও, আমি এখনো লক্ষণ গন্ডি দিই নি”, অবাক হয়ে অনি তাকালো আমার মুখের দিকে, আমি আমার কাজলের টিপ ওর কানের তলায় লাগিয়ে বললাম, “এটা তোমাকে ঝিংকু মামনি থেকে দূরে রাখবে”, আমার কথায় শুষ্ক হেসে অনি নিজের ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো। আমি ওর যাওয়া দিকে একই রকম ভাবে তাকিয়ে থাকলাম, যতক্ষণ না ও চোখের সীমানার বাইরে চলে গেলো। আমার মন বলে উঠলো, যে অনি নিজের মধ্যে কিছু একটা বড়ো লুকিয়ে রাখতে চাইছে, আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে। আমার ফোনে টুং করে আওয়াজ পেতেই আমার চিন্তায় ছেদ পড়ল। আমি ফোন বের করে করে দেখলাম মেসেজ করেছে লেখিকা,
তোমার জন্য কাপছে কেন মন
কাঁদছে কেন শূণ্য চোখের কোণ?
তোমার জন্য বুকের গহিন জুড়ে
আমার সময় নিঃশব্দ, নির্জন।
- কেমন হয়েছে এটা?
আমি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ফোন সাইলেন্ট করে ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।
চলবে……..!

মন্তব্যসমূহ