সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তুঙ্গভদ্রার তীরে






Disclaimer :- This story inspired by novel same name "তুঙ্গভদ্রার তীরে" by Saradindu Bandopadhyay. All characters are fictional if there any similarlities is purely co-incidence

তৃতীয় পর্ব
এদিকে সোমাদৃতা বন্দরের দিকে এগিয়ে গেলো বলরামের খোঁজে। কিছুক্ষন চলবার পরই তার মনে হলে কেউ যেনো তার পিছু নিয়েছে বার বার পিছন ফিরে তাকালেও কাউকে কিন্তু দেখতে পেলনা। শেষে বন্দরে পৌঁছালো সোমাদৃতা, সেখানে গিয়ে দেখে বলরাম ময়ূরপঙ্খী নৌকার পাটাতনে বসে মেরামত করছে। তাকে দেখে সোমাদৃতার মুখে হাসি ফুটে উঠলো, সে ডাক দিল, “ভাই বলরাম!!!”
বলরাম এদিক ওদিক তাকালো তারপর সোমাদৃতাকে দেখতে পেয়ে সে নীচে নেমে এলো। দুজনের মধ্যে কুশল বার্তা বিনিময় হলো তারপর বলরাম বললো, “শুনলাম তোমাকে নাকি রাজা মশাই ডেকেছিল?”
উত্তরে হ্যাঁ বলে সোমাদৃতা সমস্ত ঘটনা বিস্তারে বললো, শুনে বলরাম বললো, “বাহ তুমি এসেই রাজার কৃপা দৃষ্টি পেলে, এবারের বারে আমার ব্যাপারেও বলো রাজাকে”।
সোমাদৃতা বললো, “কাল ভোরেই রাজা আমাকে ডেকেছেন ওই সময় তোমার কথা বলবো”।
“ধন্যবাদ বন্ধু”।
এদিক ওদিক তাকিয়ে গলা নীচু করে সোমাদৃতা বললো, “ভাই বলরাম কিছুক্ষন আগে থেকে একটা লোক আমার পিছনে ছায়ার মতো লেগেছে কিন্তু তাকে ধরতে পারছিনা!”
বলরাম হেঁসে বললো, “তোমার পিছনে রাজামশাই গুপ্তচর লাগিয়েছেন সে পরীক্ষা নিচ্ছেন তোমার, রাজনীতি বড়োই জটিল বুঝলে বন্ধু”।
সোমাদৃতা অবাক হলো, যে রাজা তার সত্য বলাই খুশি হয়ে মহর দিলো সেই রাজাই আবার তার পিছনে গুপ্তচর লাগিয়েছেন, সত্যিই রাজনীতি বড়োই জটিল।
পরদিন ভোরে রাজার কথা অনুযায়ী সোমাদৃতা গেলো রাজদরবারের দিকে সঙ্গ নিলো বলরাম আর্ সোমাদৃতার গোপন বিদ্যার দুটি লাঠি। বলরাম লাঠি দুটিকে বললো, “ভাইয়া এতে কি করবে লাঠি নিয়ে দরবারে ঢুকতে দিবেনা!”
“এর অনেক কাজ ভাই তুমি বুঝবেনা”, হেঁসে বলল সোমাদৃতা।
রাজগৃহের দরজা পর্যন্ত এসে বলরাম ফিরে যাবার সময় বললো, “আমার কথা রাজাকে বলতে ভুলোনা”।
“অবশ্যই বলবো, এখন বিদায় দাও”।
বলরাম ফিরে অতিথিশালার দিকে ফিরে গেলো। কিন্তু দুজনের কেউই জানলো না যে এক জোড়া অস্থির চোখ বারবার সোমাদৃতাকে পর্যবেক্ষণ করছে।
সোমাদৃতা রাজকক্ষে প্রবেশ করলো কিন্তু লাঠি দুটো তাকে বাইরে রেখে আসতে হলো।
রাজকক্ষে তখন রাজা দেব রায় আর্ সেনাপতি অর্জুন বর্মা।
রাজা, সোমাদৃতাকে দেখে প্রশ্ন করলো, “এসেছো তুমি, দেখাও তোমার গুপ্ত বিদ্যা”।
সোমাদৃতা লজ্জিত হয়ে বললো, “মহারাজা তার জন্য আমার লাঠি দরকার যেগুলি আপনার দ্বাররক্ষী আটকে রেখেছে”।
রাজা আদেশ দিলেন সেগুলি সোমাদৃতাকে দেওয়া হলো। সোমাদৃতা সেগুলোকে সামনে ধরে তাতে রণ পায়ের মতো করে ধরলো আর চলতে আরম্ভ, তাতে তাকে সভ্য না লাগলেও রাজা কিন্তু হাসলেন না, গম্ভীর মুখে সোমাদৃতার গোপন বিদ্যা নিরীক্ষণ করতে লাগলো।
শেষে বললো, “ঠিক আছে, এতে তুমি ঘোড়ার থেকে দ্রুত দৌড়াতে পারো কিনা তার আসল পরীক্ষা কাল নেবো, কাল ভরে আমি আমরা সেরা গুপ্তচরের সঙ্গে আমার দক্ষিণের সীমানার সেনা প্রধানের কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠাবো তোমরা দুজনকেই দুটি চিঠি দেওয়া হবে তোমরা দুজনেই সেনা প্রধান দুজনের চিঠির ভিন্ন উত্তর দিবেন কিন্তু তার সারমর্ম এক থাকবে যে আগে ফিরে আসবে সেই বিজেতা হবে, আর্ হ্যাঁ যাতায়াত করতে দুদিন সময় লাগে এটা যেনো স্বরনে থাকে”।
সোমাদৃতা বললো, “যথা আজ্ঞা মহারাজ, কিন্তু আমার একটি অনুরোধ আছে”l
“বলো!”
“আমার একটি বন্ধু আছে নাম বলরাম সে অস্ত্রের গোপন বিদ্যা জানে তাকে যদি একটু সুযোগ দেন”।
“ঠিক আছে আগে তুমি তোমার গোপন বিদ্যায় উত্তীর্ণ হও, তারপর বলরামের কথা হবে”।
সোমাদৃতা রাজাকে প্রণাম করে চলে গেলো।
আজও একই সময় সোমাদৃতার, বিদ্যুৎমালার সাথে দেখা হলো আজও বিদ্যুৎমালা ভেজা বস্ত্রে, সোমাদৃতা বিদ্যুৎমালাকে দেখা মাত্রই ঘুরে পালানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু সে চেষ্টা বৃথা। বিদ্যুৎমালা তার আগেই ডাক দিল, “সোমাদৃতা!!”
সোমাদৃতা নিজেও জানে সে এই মধুর কণ্ঠস্বর এড়াতে পারবে না, সে দাঁড়িয়ে পড়লো কিন্তু ঘুরল না।
বিদ্যুৎমালা এগিয়ে এসে সোমাদৃতার সামনে দাঁড়ালো, তার থেকে সোমাদৃতা কিছুটা লম্বা।
সোমাদৃতার চোখে চোখ রেখে বিদ্যুৎমালা বললো, “কি ব্যাপার আমায় দেখে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেনো?”
“কই না…. না তো”, কিছুটা হকচকিয়ে বললো সোমাদৃতা।
“তাহলে?”
“না মানে একটা কাজের কথা মনে পড়লো, তাই ফিরে যাচ্ছিলাম”।
“সারাক্ষণ তো কাজ কাজ, আমাকে যদি সময় নিয়ে দেখতেন”, বিড়বিড় করে বললো বিদ্যুৎমালা।
“কিছু বললেন?”
“কই নাতো, আচ্ছা আমার সাথে পম্পা দেবীর মন্দিরে যাবেন? বড়ো একা লাগছে”।
কিছুক্ষন ভেবে তারপর সম্মতি দিলো। ওরা পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।
চলতে চলতে বিদ্যুৎমালা বললো, “আপনি এবার থেকে আমাকে তুমি বলবে!”
“তাহলে তুমিও আমায় তুমি করে বলবে”, বললো সোমাদৃতা।
“না আমি বলবো না শুধু আপনি আমায় তুমি করে বলবেন আমি আপনাকে আপনি বলেই সম্বোধন করবো”।
“কেনো?”, অবাক হয়ে করে সোমাদৃতা প্রশ্ন করে।
“আমি বলছি তাই বলবেন বেশ আর কোনো কথা নয়”, বললো বিদ্যুৎমালা কিন্তু মনে মনে বললো, “আরে বুদ্ধু যাকে মনে প্রাণে ভালোবাসি তাকে কি নাম ধরে ডাকা যায়”।
সোমাদৃতা আর কথা না বাড়িয়ে বিদ্যুৎমালার পাশাপাশি হাঁটতে থাকে।
পম্পা দেবীর মন্দিরে পৌঁছে সোমাদৃতা বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো, বিদ্যুৎমালা ভিতরে গেলো পূজা দিতে।
সোমাদৃতা, বিদ্যুৎমালার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, ভিজে পায়ের দাগ মন্দিরের উঠানে যেনো ছবি এঁকে দিয়েছে।

মন্তব্যসমূহ