সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালোলাগা ও ভালোবাসার পরে

ভালোলাগা ও ভালোবাসার পরে
ভালোলাগা ও ভালোবাসার পরে


প্রথম পর্ব

নগ্ন হয়ে খাটের একপাশে হাঁটু বুকের মধ্যে ভাঁজ করে বসে সিলিং এর দিকে কতক্ষন চেয়েছিলাম কে জানে, কান্না কখন শুকিয়ে গেছে টের পায় নি, একটু আগের নির্যাতন এখনো দু – পায়ের মাঝে অনুভব করছি। এবার পাশের মানুষটার দিকে চোখ গেল। এত কিছুর পরেও ঘৃনা করতে পারছি না। ঠিক যেনো নিষ্পাপ শুয়ে আছে আমার অনি মানে অনিন্দিতা বোস। কিভাবে কি হলো আমার কি কোথাও ভুল ছিল? একটা মানুষ এতটা পরিবর্তন হয় কিভাবে? অনি এখন শুধু আমার শরীর চাই সময়, অসময়, ইচ্ছা, অনিচ্ছা কিছুই মানতে চাইনা, তার মতের বিরুদ্ধে গেলে গালে চড়, চুলমুটি ধরে মার তারপরেও আমি অনিকে ঘৃনা করতে পারিনা কেনো কে জানে? হয়তো অনি আমার দুর্বলতা। ও আগে এরকম ছিলনা কিন্তু কিভাবে, কি, হলো কেনো, হলো? একটু আগের ঘটনাটা মনে করতে লাগলাম –

রাত তখন 8 কিংবা 9 টা হবে আমি পড়ার টেবিলে পড়ছিলাম, এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো আস্তে না জোরে জোরে, বুঝতে পারলাম অনি আজ নেশা করে ফিরছে। আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম, মুখে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে একপাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে আমার মুখের ওপর ধোঁয়া ছেড়ে বললো,
“এত দেরি হলো?”
“পড়ছিলাম”
“ওহহ”
আমাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে সটান খাটের উপর পা তুলে বসে পড়লো অনি, আমি দেখলাম জুতো পরেই খাটে পা তুলে দিয়েছে খানিকটা বিরক্ত হলাম, নেশার ঘোরে আছে তাই কিছু না বলে ওর সামনে গিয়ে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে ওর পা থেকে জুতো খুলতে লাগলাম, ও আমার মুখের দিকে নেশাতুর চোখে তাকিয়ে আছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম। আমি ওর জুতো গুলো সু স্ট্যান্ডে রেখে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম। মিনিট খানেক একই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর বললো,
“জামা খোল”
বুঝলাম নেশা চরমে আছে, তুমি থেকে তুই তে চলে গেছে, এটা এখন প্রায় হয়। আমি কোনো কথা না বাড়িয়ে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম।
“কি হলো, কথা কানে যাচ্ছে না”, অনি আবার বললো
আমি এবার ওর দিকে ঘুরে বললাম, “অনি প্লিজ, আমার মুড নেই, আমি একটা ভাইটাল চ্যাপ্টার পড়ছি ডিস্টার্ব করো না”।
অনি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো, “সেই আমি ডিস্টার্ব করছি, আর ওই মাগী টা যখন করে তখন, নেংটো হতে দু – মিনিট ভাবিস না”।
আমার মাথা গরম হয়ে এলো –

“অনি আমি বাজারের বেশ্যা নয় যে তুমি যা হয় তাই বলবে, ওর সাথে সেরকম কোনো সম্পর্ক নেই, ছিঃ এতোটা নীচু মনের হলে কিভাবে, কই আগেতো এরকম ছিলেনা, দিন দিন কি হচ্ছে তোমার, হয় আমাকে মুক্তি দাও নাহলে আবার আগের মতো ভালোবাসো আমায়”।
ওই মুখেই বলি মুক্তি দাও কিন্তু আমি কোনোদিনই চাইনি অনিকে ছাড়তে, আবার সব আগের মতো হয়ে যাবে, এখন হয়তো কিছু অনি ঝামেলায় জড়িয়ে আছে তাই এইরকম করছে।
ব্যাস আমাকে আর কিছু বলতে হলোনা, অনি খাট থেকে লাফিয়ে এসে জোরে গালে একটা চড় মারলো, গালটা চিনচিন করে উঠলো ব্যাথায়, নিমেষে চোখ দিয়ে বেরিয়ে এলো জল।
কান্না জড়ানো গলায় বললাম, “হ্যাঁ, এটাই পারো, মারো থামলে কেন, কি হয়েছে অনি তোমার?”

অনি কথা না বলে আমার ঠোঁটে, ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো, না এই ঠোঁট আর আগের অনির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, আগেরটা ছিল অনেক মিষ্টি, ক্যারিং, ভালোবাসার একটা মাধুর্য আর এখনেরটা শুধু বল পূর্বক আক্রমণ, আমাকে খাটে শুইয়ে মেতে উঠলো নিজের মনোরঞ্জনের নেশায়, আর আমি শুধু শুয়ে পড়ে থাকলাম দলা পাকানো কাগজের মতো।
ফোনের ম্যাসেজ টনে বাস্তবের সেই কালো চার দেওয়ালে কারাগারে ফিরে এলাম, অনি এখনো হা করে গুমাচ্ছে, আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম হোয়াটসঅ্যাপ থেকে একটা মেসেজ এসেছে।
খুলে দেখলাম অনি যাকে দু চোখে দেখতে পারেনা, সেই মেসেজ করেছে নাম না হয় পরেই বললো।

“জেগে আছো?”
“হ্যাঁ, তুমি?”
“হ্যাঁ, আমিও আছি কিন্তু এই নিদ্রাহীন নিশি যাপনের অর্থ কি?, জানো সোম?”

এবার আমি নিজের পরিচয় দিই, আমি সুমি যারা আমার এই ফালতু হিজিবিজি পড়ছে ধরে নাও তাদেরই মতো। বেশ এইটুকু বললেই চলবে কি বলো? এবার যে মেসেজ করছিল তার পরিচয় দিই। নাম গৌরী, সে একটা আজব প্রাণী, সারাক্ষণ ফেসবুক এ লেখালেখি করে, ওই কবি কবি কিন্তু এর ক্ষেত্রে কাব্যের অভাব হয়নি, অভাব ছিল শুধু আত্মবিশ্বাস এর, অনেক কিছু হারানোর ভয় মনের মধ্যে। ওর সাথে পরিচয় হয় এমনই পেজের মধ্য দিয়ে যার নাম ছিল “সমপ্রেমীদের ভালোবাসার গল্প”, সেখানে একটা গল্প লিখেছিলো 
"it’s only happened in Calcutta” নামে, না ভালো, না খারাপ, মোটামুটি লিখেছিলো। এপ্রিশিয়েট করার জন্য পেজ ইনবক্স এ মেসেজ করি সেই থেকে আজ হোয়াটসঅ্যাপ পর্যন্ত চলে এসেছে। আমার নাম সুমি জানে তবুও সোম বলে ডাকে প্রথমে ঠিক করিয়ে দিতাম এখন আর করাই না বেশ ভালো লেগেছে নামটা আমারও।

“কি হলো, উত্তর দিচ্ছনা না যে?”, আবার মেসেজ টন বেজে উঠলো।
“হয়তো দুটি রাত জাগা নিশাচরের গল্প করার জন্য”, আমি উত্তর দিলাম।
“😅😅😅😂”, রিয়েক্ট এলো।
“যদি তাই হয় তাহলে একজন বসে বসে কাঁদে কেনো, আর একজন বসে বসে দিন গোনে কেনো?” ,সে আবার বললো।
“উত্তর আমারও জানা নেই গৌরী”, আমি বললাম।
“ আচ্ছা গৌরী নামের মানে জানো”, সে জিজ্ঞেস করলো।
“না, গো”
“অবিবাহিত অষ্টমবর্ষিয়া বালিকা”, বললো গৌরী।
“এই কিছু মন ভালো করার কথা বলোনা”, বললাম আমি।
“কেনো, অনি কি আজকেও……”, বলে থেমে গেলো, ও জানে অনি কি করে আমার সাথে। এর জন্য আমি পুরোপুরি আমি দায়ী নয়, অনির অত্যাচারের পর মন ভোলানোর জন্য গৌরিকেই বিশ্বস্ত মনে হয়েছিল।
“এটার উত্তর সেই একই হবে তার থেকে তুমি কিছু বলো”, আমি বললাম।
ফোনের স্ক্রীন এ টাইপিং শুরু হলো….


“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, আর লেখকের কল্পনা মধ্যে একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে বুঝলে সোম। তুমি আজ এক লেখকের কল্পনার কলমে জীবিত হয়ে, তোমার নিজের বাস্তব গড়ে তুলেছ, যেখানে অনি নামের একজনকে পেয়েছো, ওই লেখকের কলমের কালি যদি শেষ হয়ে যায়, তখন তুমি পারবে নিজের বাস্তব নিজের পরিচয় টিকিয়ে রাখতে? নাকি চাইবে অন্য লেখককে যে তোমার গল্পকে আরো ভালো করে লেখার জন্য সাদা পাতা আগে থেকে গুছিয়ে রেখেছে?”

বুঝতে পারলাম কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

“আমি চাই এই লেখকই আমার গল্প লিখুক, আর কালি শেষ হলে কালি ভরার সময় টুকু না হয় আমি একটু অপেক্ষা করবো মৃত হয়ে, ভালবাসার জন্য বাঁচা নিশ্চই আমার থেকে তুমি ভালো বুঝবে যেহেতু তুমি একজন নিজে লেখিকা”, আমি বললাম।
“ওহহ, আচ্ছা আজ তাহলে রাখি, গুড নাইট”
“গুড নাইট”



আজ আসি বন্ধুরা নাহলে লেখকের কালি নয় ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাবে🤭🤭🤭

মন্তব্যসমূহ