সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তুঙ্গভদ্রার তীরে

তুঙ্গভদ্রার তীরে


Disclaimer :- This story inspired by novel same name "তুঙ্গভদ্রার তীরে" by Saradindu Bandopadhyay. All characters are fictional if there any similarlities is purely co-incidence

ষষ্ঠ পর্ব



অর্জুন বর্মা একবার বিদ্যুৎমালা আর একবার সোমাদৃতার মুখের দিকে তাকালো, কিছু বোঝার চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো বুঝতে না পেরে বললো, “রাণীমা, ক্ষমা চাইছি, সোমাদৃতার সাথে আমার কিছু পরামর্শ করার আছে আপনি যদি প্রস্থান করেন তাহলে আমি ব্যাধিত থাকবো”।
সোমাদৃতা কিছুটা অবাক হলো, বিদ্যুৎমালা একবার সোমাদৃতার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে চলে গেল সেখান থেকে।
সোমাদৃতা, অর্জুন বর্মাকে নিয়ে গুহার ভিতরে নিয়ে বসলো। পরমার্শ করতে করতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো, হটাৎ অর্জুন বর্মা উঠে বললো, “ঠিক এ কথাই রইলো, আজ মধ্য রাত্রিতে তুমি প্রস্তুত থেকে”।
সোমাদৃতা সম্মতি দিলো। অর্জুন বর্মা চলে গেলে সোমাদৃতা তার সব থেকে প্রিয় ছুরিটায় আরো শানিত করতে লাগলো।
সোমাদৃতা মধ্যরাত্রির কিছু আগে চাদর মুড়ি নিয়ে বেরিয়ে এলো গুহা থেকে, চুপিসারে এগিয়ে গেলো রাজমহলের দিকে, আজ এখনো রাজ কক্ষে মৃদু প্রদীপের আলো জ্বলছে। সোমাদৃতা পা টিপে টিপে রাজ কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করলো, রাজা দেব রায় কিছু কাজ করছিলেন বোধহয় এখন, তিনি গুমিয়ে পড়েছেন রাজসিংহাসনের ওপর। সোমাদৃতা শেষ হয়ে আসা প্রদীপের আলোটাকে এক ফুঁকে নিভিয়ে দিলো, তারপর ঘাপটি মেরে বসলো সিংহাসনের পাশে। প্রথমে কিছুই হলো না, তাহলে কি সেনাপতি অর্জুন বর্মা ভুল সংবাদ পেয়েছিলেন, না আর বেশি অপেক্ষা করতে হলোনা সোমাদৃতাকে। কিছুক্ষন পরে একটা আবছা মূর্তিকে দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে বুঝতে পারলো সোমাদৃতা। হাতে একটা ধারালো ছুরির আভাস পেলো সোমাদৃতা, সে নিজের কোমরের ছুরিটা শক্ত করে হাতের মুঠোয় ধরলো। মূর্তিটা এসে সিংহাসনের সামনে দাঁড়ালো, তারপর ছোট হাসি দিয়ে বললো,
“আজ থেকে এই সিংহাসন শুধু আমার”,
সোমাদৃতার বুঝতে বাকি রইলনা এই আততায়ী কে? দেব রায়ের নিজের রক্তের ভাই নাগেন্দ্রহরী, সত্যিই সিংহাসনের লোভ কতো মারাত্মক, একজন ভাই আর একজনের বুকে ছুরি বসাতে দু দণ্ড ভাবে না। এটাই কি শিক্ষিত সমাজ?
নাগেন্দ্রহরী ছুরিটা ওপরে তুললো, দেব রায়ের বুকে বসানোর জন্য, কিন্তু সে ছুরি আর দেব রায়ের বুকে বসলো না। নাগেন্দ্রহরী যখন বুকে বসানোর জন্য ছুরি নীচে নামাতে যাবে ঠিক এমন সময়, সোমাদৃতা ছুরির ধারালো অংশটা নিজের হাতে ধরে ফেললো। সোমাদৃতার হাত কেটে গেলো, রক্ত টপ টপ করে পড়তে লাগলো দেব রায়ের বুকে, দেব রায় বুকের মধ্যে কিছু একটা গরম অনুভব করতেই চকিতে উঠে বসলেন। সামনে কি হচ্ছে বুঝতে একটু সময় লাগলো, এরপর সোমাদৃতা তার নিজের ছুরি দিয়ে আঘাত করলো নাগেন্দ্রহরীর পেটে, একটা আর্তনাদ করে ছিটকে পড়লো নাগেন্দ্রহরী মেঝেতে। তলপেট চেপে গোঙাতে লাগলো নাগেন্দ্রহরী। দেব রায়ের বুঝতে আর কিছু বাকি রইলনা না। সে রাজ কক্ষের ঘণ্টা বাজিয়ে রক্ষীদের সূচনা দিলেন। অসময়ে রাজ কক্ষের ঘণ্টা শুনে অনেকেই বিচলিত হয়ে রাজ কক্ষের দিকে ছুটে গেলো, কিছু রক্ষী এলো, সেনাপতি অর্জুন বর্মাও এলো, অতিথিশালা থেকে মনিকঙ্গনা আর সাথে বিদ্যুৎমালা। একজন রক্ষী রাজ কক্ষের প্রদীপে অগ্নি সংযোগ করতেই গৃহে আলোর রোশনাই ভরে উঠলো। সবাই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, সোমাদৃতা হাত চেপে দাঁড়িয়ে রইলো, একমাত্র বিদ্যুৎমালা সেটা লক্ষ্য করে ছুটে গেলো সোমাদৃতার কাছে। সোমাদৃতার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,
“কি হয়েছে দেখান আমাকে”।
সোমাদৃতা আস্তে আস্তে নিজের হাত বিদ্যুৎমালার দিকে এগিয়ে দিলো। বিদ্যুৎমালা, সোমাদৃতার হাতে গভীর ক্ষত দেখে আঁতকে উঠলো। নিজের কাপড়ের একটা অংশ ছিঁড়ে সোমাদৃতার হাতে বেঁধে দিয়ে তাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো। রাজা দেব রায়ের মনে একটা খটকা লাগলো কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে নাগেন্দ্রহরীর দিকে এগিয়ে গেলো। নীচে ঝুঁকে নাগেন্দ্রহরীর গলা চেপে বললো,
“রক্ষী বিদুর সেন, নিয়ে যাও একে, রাজবৈদ্রকে বলো সুস্থ করতে, তারপর কারাগারে রেখো। কাল সকালে জনসমক্ষে এর শাস্তি বিচার হবে”।
দুজন রক্ষী নাগেন্দ্রহরীকে কাঁধে ভর দিয়ে প্রস্থান করলো। তারপর রাজা দেব রায় বাকিদের দিকে ঘুরে বললেন,
“এত রাত্রে আপনাদের ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, আপনারা যে যার কক্ষে ফিরে যান”।
সবাই এক এক করে চলে গেলো, কিন্তু বিদ্যুৎমালা কিছুতেই ছাড়তে নারাজ সোমাদৃতাকে।
দেব রায় আবার বললেন, “বিদ্যুৎমালা তুমিও তোমার কক্ষে ফিরে যাও”।
বিদ্যুৎমালার কানে যেনো কথাই পৌঁছচ্ছেনা। সে আরো শক্ত সোমাদৃতাকে জড়িয়ে ধরে।
এরপর সোমাদৃতা, বিদ্যুৎমালার থুতনিতে হাত রেখে তার মুখের দিকে ধরে ইশারা করে, বিদ্যুৎমালা চোখ নামিয়ে সুবোধ বালিকার মতো প্রস্থান করে।
রাজা দেব রায় একবার বিদ্যুৎমালার চলে যাওয়ার দিকে কেমন করে তাকিয়ে থাকে কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। রাজ কক্ষে এখন মাত্র তিনটি প্রাণী। সোমাদৃতা, সেনাপতি অর্জুন বর্মা আর রাজা স্বয়ং দেব রায়।
দেব রায় এবার সোমাদৃতার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, তার হাত দেখে বলে, “কেমন লাগছে এখন”
“না, ঠিক আছি, মহারাজ”।
“তুমি কি করে জানলে, যে নাগেন্দ্রহরী এরমকাম কান্ড ঘটাবে?” কৌতুহল হয়ে প্রশ্ন করলো রাজা দেব রায়।
উত্তর কিন্তু সোমাদৃতাকে দিতে হলোনা পিছন থেকে অর্জুন বর্মা বললো, “চর সূত্রে খবর কানে এসেছিল যে, আজ নাগেন্দ্রহরী আপনার কাজের সুযোগ আপনার হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আমি সেটা সোমাদৃতাকে বলি এবং দুজনে পরামর্শ করে ঠিক করি আজই হাতে নাতে ধরবো, এবং হলোও তাই, সোমাদৃতার বাহাদুরির জবাব নেই, মহারাজা”।
এতকিছু শুনে দেব রায় এবার সোমাদৃতার দিকে ঘুরে, তার কাঁধে হাত রেখে বললো, “হে বঙ্গ নারী, তোমার বাহাদুর কর্মকাণ্ডে আমি মুগ্ধ, তোমার কাছে আমি ঋণী হয়ে রইলাম, কোনোকিছু প্রয়োজন বোধ করলে, শুধু জিজ্ঞেস করো”।
“তার, আর প্রয়োজন হবে না মহারাজ”, মুখে বলে সোমাদৃতা, কিন্তু মনে বলে, “কয়েক দিনই পরই আপনার কাছে এমন একটি জিনিস চাইবো তখন কি দিতে পারবেন?”
দেব রায় আবার বলে, “তোমাকে আমার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী করলে তুমি নিশ্চই অবজ্ঞা করবে না”
সোমাদৃতা কিছুক্ষন ভেবে বলে, “না, মহারাজ আমার আপত্তি নেই, আমার সুবিধাই হবে”।
“তাহলে, কাল থেকে তুমি আমার দেহরক্ষীর ভূমিকা পালন করবে”।
“যথা আজ্ঞা মহারাজা”, বলে প্রস্থান করলো সেনাপতি অর্জুন বর্মা আর সোমাদৃতা।


এভাবে আরো দিন একটা একটা করে পার হতে লাগলো, তিন মাস সময়ও শেষ হয়ে আসতে লাগলো।
একদিন ভোরে দেব রায়ের আগে রাজ কক্ষে উপস্থিত হলো সোমাদৃতা, দেহরক্ষী হবার পর থেকে সবদিন দেব রায়ের আগে রাজ কক্ষে উপস্থিত থাকে সোমাদৃতা। আজও ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু আগে থেকেই আর একজন অপেক্ষা করছিল সোমাদৃতার জন্য। সে আর কেউ নয় বিদ্যুৎমালা, সে জড়িয়ে ধরলো সোমাদৃতাকে। সোমাদৃতাও জড়িয়ে ধরলো সমান ভাবে। বিদ্যুৎমালার গালে, কপালে, ঠোঁটে চুম্বনে ভরিয়ে দিল সোমাদৃতা।
বিদ্যুৎমালা, সোমাদৃতাকে থামিয়ে বললো, “এভাবে আর কদিন? আমি আপনাকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারছিনা”, এবার বিদ্যুৎমালা, সোমাদৃতার হাত নিজের বুকের মধ্যে বসিয়ে বলে, “দেখুন এই ছোট্ট বস্তুটা শুধু আপনার জন্য ধকধক করছে”।
সোমাদৃতা এবার নিজের ঠোঁট, বিদ্যুৎমালার ঠোঁটে ডুবিয়ে অমৃত সুধা পান করতে থাকে অনেক্ষণ ধরে। তারপর বলে, “আমায় আর একটু সময় দাও, আমি ঠিক তোমাকে আমার করবো”। এবার আস্তে আস্তে সোমাদৃতা নিজের একটা হাত, বিদ্যুৎমালার পেটের ওপর রাখে, বিদ্যুৎমালার সারা দেহ কেঁপে কেঁপে উঠে। গাল লজ্জায় লাল হয়ে উঠে। সোমাদৃতার যখন আরো নীচের দিকে নামতে থাকে তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা বিদ্যুৎমালা, উনমুক্ত করে দেই নিজেকে সোমাদৃতার কাছে।
এমন সময় কক্ষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল দাসীদের প্রধান হেমলতা। সে দুটি নারীর ফিসফিসিয়ে কথা আর হালকা হালকা চিৎকারে থমকে যায়। এত ভোরে রাজ কক্ষে কারা ফিসফিসিয়ে কথা বলছে, আর এরকম চিৎকার শুধু একসময়ই হয়। সে ঝাঁকিয়ে পর্দা সরিয়ে দেখে যেনো আঁতকে উঠে, হাতে থাকা রেকাব মেঝেতে পড়ে ঝনঝন করে উঠে সারা রাজ কক্ষ।
চলবে………!

মন্তব্যসমূহ