সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

না যেও না রজনী এখনো বাকি

না যেও না রজনী এখনো বাকি
না যেও না রজনী এখনো বাকি



“I need breakup”, বললো অপর্ণা,
“কি?”, আমি সোফায় বসে তখন UPSC exam এর আগের বছরের প্রশ্নপত্র দেখছিলাম, এই নিয়ে দুবার attempt করছি প্রথম বছর খুব ভালো rank হয়নি, তাই আবার দিচ্ছি। লক্ষ্য IAS.
অপর্ণা কি বলেছে সেটা কানে যেতেই তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে বসে অপর্ণার মুখের দিকে তাকালাম। চোখ গুলো কেমন যেনো ঈসত ঘোলা ঘোলা লাগছে।
“আমি কি বলেছি সেটা ভালো মতোই শুনতে পেয়েছো”, বললো অপর্ণা।
আমি উঠে অপর্ণার সামনাসামনি দাঁড়ালাম। নাকে Wine এর গন্ধ লাগলো।
“তুমি ড্রিংক করেছো?”, আমি উঠকণ্ঠা ভরে জিজ্ঞেস করলাম।
“সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার কি করবো না করবো, তুমি বলার কে?”, জড়িয়ে জড়িয়ে কথার মধ্য দিয়ে বললো অপর্ণা।
“I am your fucking girlfriend, God dam it”, আমি গলায় সুর চড়িয়ে বললাম।
হ্যাঁ অপর্ণা আমার গার্লফ্রেন্ড আর আমি ওর, vise-varsa, আমি যেই মেসে থাকি তার ক্যান্টিনের মালিকের মেয়ে, সে পড়াশুনা খুব একটা করেনি, যা হোক করে M.Sc করে বসে আছে বাপের টাকা আছে দিব্যি চলে যাচ্ছে। আমি মধ্যবিত্ত, তাই পড়াশুনা আর প্রেম ছাড়া সম্বল কি আছে? তাও যে বিরাট বুদ্ধি আমার এমন নয়, ওই না আগের না পরের, মাঝের আমি। তারপর আমি আবার লেসবিয়ান, ছোটবেলায় খুব লেবু খেতাম তার জন্য কিনা জানিনা? জানি লেবুর সাথে লেসবিয়ান এর দুর দুর পর্যন্ত সম্মন্ধ নেই, তবুও অনেকে টিপ্পুনি কেটে লেবু বলে তাই বললাম। ছোটবেলা নিজেকে accept করতে করতেই যৌবনে পা দিয়ে ফেললাম, অনেককে পেলাম আমার মতো, আরও নতুন কিছু জানতে পারলাম, প্রান্তিক মানুষদের কথা। বাড়ির একমাত্র হাওয়াই বয়স যখন 20 এর কোঠায় তখন বাবা মা বিয়ের থেকে রোজগারে বেশি জোর দিতে বললেন, হাফ ছেড়ে বাঁচলাম বিয়ে নিয়ে মিথ্যে বলতে বলতে।
IAS হওয়ার লক্ষ্যে পাড়ি জমালাম কলকাতায়, সেখানে পরিচয় অপর্ণার সাথে, তৈরি হলো বন্ধুত্ব সেখান থেকে প্রেম।
“Did cat catch your tongue?”, অপর্ণার ডাকে বাস্তবে ফিরে এলাম।
“কিন্তু কেনো?, এতদিনের সম্পর্ক এভাবে নষ্ট করো না, আমার সামনে exam, আমি তোমায় খুব ভালোবাসি, আমি শেষ হয়ে যাবো, please অপর্ণা”
“না, শ্রী, আমি হাফিয়ে উঠছি, I need to be free,” অপর্ণা সামনের সোফায় বসে গা এলিয়ে দিলো।
আমি ওর সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে গালে দু হাত রেখে বললাম, “আমায় বলো আমি ভুল শুধরে নেবো, বলো আমায় অপর্ণা please.”
“তোমার কোনো ভুল নেই, শ্রী, তুমি আমার থেকে আরো ভালো কাউকে পেয়ে যাবে শ্রী আমায় ক্ষমা করো”
“আমি তোমার থেকে ভালো কাউকে চাই না আমি তোমাকেই চাই, প্লীজ বলো কি হয়েছে তোমার”
“সত্যি শুনার ক্ষমতা আছে তোমার, শ্রী?”
“আমি সত্যকে ভয় পাই না, অপর্ণা, বলো অপর্ণা”
“I slept with Rubi…!”
“কি….?” , আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।
“কেনো, আমার মধ্যে কি কম ছিল, হ্যাঁ মানছি আমি exam preparation এর জন্য আমাদের কমিউনিকেট কম হয়েছে, কিন্তু তুমি তো তাই বলেছিলে যাতে আমার ডিস্টার্ব না হয়,” আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, বুঝতেই পারিনি কখন এক ফোঁটা, দু ফোঁটা করে জল চোখ থেকে বইতে শুরু করেছে।
“দু মাস থেকে আমি, রুবির সাথে মেলামেশা করেছি, এখন ও আমাদের মধ্যে সব কিছু অফিসিয়াল করতে চাই, আর আমার মধ্যে তোমাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই, সবটা জুড়ে রয়েছে রুবি, আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি, আমায় মাপ করো, I am sorry”
“I am sorry কতো সহজে বলে দিলে, আমার ভিতরে কি হবে সেটা একবারও ভেবে দেখলে না, I love you more than myself dam it”
“I am sorry আমি আর কিছুই বলতে চাই না, তুমি থাকো তোমার পড়াশোনা নিয়ে, আর এই নাও তোমার রিং অন্য কোনো আঙ্গুল খুঁজে নিও”, বলে অপর্ণা নিজের অনামিকা থেকে আমার দেওয়া আংটি খুলে আমার হাতে ধরিয়ে দরজার এগিয়ে গেলো।
আমি অনেকক্ষন কান্না ভরা চোখে আংটিটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, “কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
“রুবির কাছে, সে দাঁড়িয়ে আছে বাইরে”
“ওহহ…..
সারা রাত নিস্তব্ধ, আমি এখনো ভাবতে পারলাম না অপর্ণা আর আমার নেই, দূরে কোথাও একটা গান চলেছে “না যেও না, রজনী এখনো বাকি……….”





আজ আবার 10 বছর পর আবার আমি, অপর্ণা মুখোমুখি। তবে সোফা আর ক্যাঁচ ক্যাঁচ করা ফ্যান আজ পরিবর্তন হয়ে AC আর মেহগনি কাঠের টেবিলে। আমি এখন একজন IAS অফিসার, আমার গেটের সামনে থাকে দুজন রাইফেল ধারি বডিগার্ড। আজ অপর্ণা এসেছে আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হবার ইন্টারভিউ দিতে। রুমের বাইরে আরো কয়েকজন অপেক্ষা করছে।
অপর্ণার মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে, মুখে লাস্যময়ী হাসি আর নেই, নেই চোখের চারুলতা।
“কেমন আছো শ্রী?”, আবহাওয়া নরম করার জন্য হয়তো বললো অপর্ণা।
“ভালো, বসো”
অপর্ণাকে চেয়ার এ বসতে বললাম।
“জিজ্ঞেস করবে না, আমি কেমন আছি?”
“না, আমি এখনও তোমার মনের কথা চোখে পড়তে পারি”
“এখন তুমি আরো সুন্দর হয়েছে, এখনো কি রেগে আছো আমার উপর”
“এটা এখন অবান্তর প্রশ্ন অপর্না, যদি উত্তর জানতে চাও তাহলে না, আমি তোমার উপর রেগে নাই”
আমি অপর্ণার বায়োডাটা চেক করায় মনোনিবেশ করলাম। Qualification খুব কম।
“বাবা, কেমন আছে, আর রুবি?”
“বাবা সাথে আর কথা হয়না, আমি তার মেয়ে হাওয়ায় নাকি কলঙ্ক তার”
কিছুটা থেমে আবার বললো, “রুবি, সে চকমকি পাথর ছিল, এলো ব্যবহার করলো চলে গেলো, সত্যিই একটা ভুল সিদ্ধান্তে আমার সব শেষ হয়ে গেলো”
“নিজেকে দোষারোপ করোনা, আমরা মানুষ আমরা ভুল করেই থাকি, অনেক কিছুরই সঠিক সিদ্ধান্ত করতে পারিনা। সব ঠিক হয়ে যাবে”।
“আমি সব ঠিক করতে চাই, আমাকে আর একটা সুযোগ………”
কথা শেষ করতে হলো না অপর্নাকে, আমার ফোনটা বেজে উঠলো।
“sorry I have to take this”, বলে আমার পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলাম রিতু ফোন করেছে, মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
আমি কানে ধরলাম ফোনটা, ওপাশ থেকে রিতু বললো,
“babe, are you coming home early, I have surprise for you, আর আমি তোমার পছন্দের ডিনার বানাচ্ছি”।
“হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি ফিরবো”।
“aww, so sweet, I love you so much”.
“I love you too princess”
ফোন রেখে আমি অপর্ণার দিকে তাকালাম, ওর চোখ ছলছল করছে। আমি বললাম,
“কি বলছিলে?”
“না তার আর প্রয়োজন নেই, আজ উঠি, দেরি হয়ে যাচ্ছে বাকিরাও অপেক্ষা করছে”
অপর্ণা উঠে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ঘুরে তাকিয়ে বলল, “
বোধহয় তুমি তোমার আংটির যোগ্য আঙ্গুল পেয়ে গেছো, best of luck”
আমি উত্তর না দিয়ে শুধু একটা হাসি দিলাম।
আমি বাকিদের বলে দিলাম আজ ইন্টারভিউ আর নেবোনা, কালকে আসতে বললাম বাকিদের।
আমি ব্যালকনিতে দাঁড়ালাম, আকাশের মুখ গম্ভীর, মনে হয় এখুনি বৃষ্টি হবে, হলোও তাই বড়ো বড়ো ফোঁটা আকারে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো।
নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অপর্ণা, দাঁড়িয়ে আছে ট্যাক্সি ধরার জন্য অপেক্ষা করছে, একটা হলুদ টাক্সি সামনে এসে দাঁড়ালো, মাথায় বায়োডাটার ফাইলটা তুলে ধরলো বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য, টাক্সির দরজা খুলে শেষ বারের মতো আমার বিল্ডিং তার দিকে শেষ বারের মতো তাকালো, ব্যালকনিতে আমাকে দেখতে পেয়ে, টাক্সীর ভিতরে চেপে বসলো, টাক্সিতা ছুটে রাস্তার গলির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো। মনে একটা গানের সুর অজান্তেই গেয়ে উঠলো,
না যেও না
না যেও না
রজনী এখনও বাকি
আরও কিছু দিতে বাকি
বলে রাত জাগা পাখি
না যেও না

মন্তব্যসমূহ