সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তুঙ্গভদ্রার তীরে






Disclaimer :- This story inspired by novel same name "তুঙ্গভদ্রার তীরে" by Saradindu Bandopadhyay. All characters are fictional if there any similarlities is purely co-incidence

পঞ্চম পর্ব

“কি….কি.. বললে রাজকুমারী? আমি ঠিক বুঝলাম না”, আচম্বিত হয়ে বলে সোমাদৃতা।
“বুঝতে পারছেন না নাকি বুঝতে চান না”, হাত দুটো বুকের উপর এনে ভাঁজ করে বলে বিদ্যুৎমালা।
এবার সোমাদৃতা ধরা দিলো বিদ্যুৎমালার কাছে। আস্তে আস্তে সোমাদৃতার চোখ বিদ্যুৎমালার মুখের ওপর থেকে নেমে এলো মাটির দিকে।
“এটা সম্ভব নয় রাজকুমারী, তোমার আমার প্রেম তোমার অনেক বিপর্যয় ডেকে আনবে”, করুন সুরে বললো সোমাদৃতা।
বিদ্যুৎমালার মুখে একটা তৃপ্তির হাসির রেখা ফুটে উঠলো, তার সোমাদৃতা তাকে “তুমি” বলে সম্বোধন করেছে, কিন্তু সে হাসি ক্ষনিকের বাস্তবের চেহারা গ্রাস করতেই সে হাসি গোলাপী আভার পিছনে আবার মিলিয়ে গেলো।
“আমি বাস্তবের চিন্তা করিনা, আমি শুধু আপনাকে ভালোবাসি এইটুকুই জানি, আর আমি আপনার জন্য হাসি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্ত……..”, আর কিছু বলতে পারলো বিদ্যুৎমালা, তার ঠোঁটের উপর এখন সোমাদৃতার একটি আঙ্গুল চাপ সৃষ্টি করেছে।
“চুপ একদম চুপ এরকম কথা আর বলবে না”
“তাহলে আমায় স্বীকার করছো না কেনো? আমি কি দেখতে খারাপ, নাকি অন্য কেউ আছে আপনার মনের মধ্যে?”, বলে নিজের ঠোঁট কামড় ধরে বিদ্যুৎমালা।
সোমাদৃতা কোনো কথা না বলে নিজের ঠোঁট দুটি ডুবিয়ে দেয় বিদ্যুৎমালার ঠোঁটের উপর, জানান দেই তার মন, তার ধ্যান ও জ্ঞানে একমাত্র বিদ্যুৎমালা বিরাজ করে।
উভয়ের শরীরে এক নতুন ভালোলাগা কাজ করে, যেনো শত ডানার প্রজাপতি শত রঙের ছটা এঁকেছে। নতুন করে জগৎকে জানতে ইচ্ছা করে তাদের চোখ দিয়ে, যেখানে আর্য ও অনার্য দন্ধ থাকবে না, থাকবে শুধু মানুষে মানুষে ভালোবাসা আর থাকবে তাকে সম্পূর্ন করার প্রতিজ্ঞা।
সোমাদৃতা, বিদ্যুৎমালার ঠোঁট ছেড়ে দেই, দুজনেরই নিশ্বাসের প্রয়োজনে। সোমাদৃতা দেখে বিদ্যুৎমালার চোখে জল গাল বেয়ে পড়ছে লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁটের ওপর। সোমাদৃতা হাতে করে বিদ্যুৎমালার জল মুছতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। বিদ্যুৎমালা সোমাদৃতাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি, আপনাকে ছাড়া কাউকেই ভাবতে পারিনি, এ শরীরে শুধু আপনার অধিকার যদি আপনি আমাকে স্বীকার না করেন, এই শরীর নষ্ট করতে দুবার ভাববো না”।
এমন সময় করো পায়ের আওয়াজ শোনা যায়, দুজনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও পৃথক হতে হয় কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকে দুজনে, বলরাম আসে, সে রাজমহল থেকে ফিরছিলো। সে রাজকুমারীকে বিদ্যুৎমালাকে দেখে মাথা নত করে প্রণাম করে। কিন্তু বিদ্যুৎমালার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সেইদিকে, সে সোমাদৃতার দিকে তাকিয়ে বলে, “কালকে আমি আমার আসবো”, বলে সেখান থেকে চলে আসে, সোমাদৃতা শুধু তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আর একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে।


সাঁঝ বেলায় সোমাদৃতা আর বলরাম গুহার সামনে আগুন ধরিয়ে বসে সূরা পান করছে আর সারাদিনের কাজের বিবরণ দিচ্ছে, কিন্তু আজ সোমাদৃতাকে বড় অন্যমনা লাগছে, তার চিত্ত চঞ্চল মন বারবার ছবি আঁকছে বিদ্যুৎমালার চোখের, ভ্রু – এর, কালো ঘন চুলের, রক্তিম ঠোঁটের……… সারা শিহরিত হয়ে উঠছে সোমাদৃতার সে কিছু ভাবতে পারছে না। আগুনের থেকে একটু সরে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো সোমাদৃতা। এই প্রেমের শেষ পরিণতি কি সেটাই ভাবিয়ে তুলছে সোমাদৃতাকে। যে রাজা দেব রায়ের প্রিয় পাত্র সে, তাকে ছাড়া দেব রায়ের একপক্ষ চলেনা, সে কিনা তার মহারাজের ভাবি রানীর সাথে……. ছি…..! নিজেকে স্বার্থপর মনে হলো সোমাদৃতার। সে তার অন্ন দাতার পিঠেই চুরি মারতে চলেছে। সে মনে মনে ঠিক করলো সে বিদ্যুৎমালাকে স্বীকার করবেনা, ফিরিয়ে দিবে, ঠিক বুঝিয়ে বললে নিশ্চিত বুঝবে, আর যদি না বুঝে তাহলে বলে দেবে যে তার মনে অন্য কেউ বিরাজ করে, কিন্তু কার নাম বলবে, পরক্ষণেই বলরামের কথা মাথায় আসে, সে বিদ্যুৎমালাকে বলবে যে, সে বলরামকে ভালোবাসে। সোমাদৃতা এই স্থির করে পিছনে ঘুরে থাকায়, বলরামের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য কিন্তু ফিরে দেখে বলরাম সূরা পান করে অঘোরে ঘুমাচ্ছে, আর সুরার পাত্র থেকে একটি ইন্দুর বাচ্চা চুক চুক বাকি পড়ে থাকা সূরা খাবার চেষ্টা করছে, এই দৃশ্য থেকে সোমাদৃতা একটা শুষ্ক হাসি দিয়ে উঠে।


পরদিন ঠিক যথা সময় বিদ্যুৎমালা এসে উপস্থিত হয়, সোমাদৃতা পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে এক চিত্তে পুকুরের জলের তাকিয়ে ছিল, একটা ব্যাঙ পদ্ম পাতায় উঠছে আবার পুকুরের জলে ডুব দিচ্ছে, বারবার এরকম করতে থেকে ব্যাঙটা।
হটাৎ দুটি হাত সোমাদৃতার কোমড় জড়িয়ে ধরে, সোমাদৃতার বুঝতে বাকি থাকেনা এই হাত কার, সে আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ায়। তার মুখ বিদ্যুৎমালার অনেক কাছে চলে আসে। বিদ্যুৎমালার গরম নিশ্বাস সোমাদৃতার ঠোঁটের উপর পড়তে থাকে। সোমাদৃতা অনেক সংযত প্রকৃতির মেয়ে, এত কাছে তার প্রেমিকাকে পেয়েও, সে নিজেকে আটকে রাখলো।
মিনমিনে গলায় সোমাদৃতা বললো, “বিদ্যুৎমালা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে শুনবে?”
“আপনার সব কথাই আমি শুনতে বাধ্য প্রাণনাথ, আপনার প্রত্যেক উক্তি আমার জীবনের লক্ষ্য মার্গ”, উজ্জ্বলতা নিয়ে বলে বিদ্যুৎমালা।
সোমাদৃতা, বিদ্যুৎমালার মুখ এক অমূলক উপাধি শুনে লজ্জায় লাল হয়ে উঠে। সে বিদ্যুৎমালার হাত ধরে একটা পাথরের আড়ালে নিয়ে আসে। অনেক্ষণ বিদ্যুৎমালার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেললো।
তার পর অনেক শক্তি সঞ্চয় করে করলো, মনে হলো তার বুকে কেউ যেনো হাজারটা ধারালো বর্সা দিয়ে তার বুকে আঘাত করছে, তারপর বললো,
“বিদ্যুৎমালা তুমি আমাকে ভালোবেসে ভুল করেছো, তোমার আমার ভবিষ্যত অন্ধকার”
“কি বলতে চান আপনি?”, ভারী গলায় বলে বিদ্যুৎমালা। স্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে সে কান্না চেপে রেখেছে।
সোমাদৃতা আবার বলে, “মানে তুমি এই রাজ্যের ভাবি রানী, যে রাজা আমাকে এত কিছু দিয়েছেন তার সাথে আমি এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করি কিভাবে, রাজা পিতা সমান, তার অর্ধাঙ্গিনীকে কিভাবে নগ্ন অবস্থায় কল্পনা করি কিভাবে, এত বড় পাপের বোঝা নিয়ে বাঁচবো কিভাবে? বলো আমায়”
বিদ্যুৎমালা কাঁদো কাঁদো চোখে তাকায় সোমাদৃতার চোখে হয়তো কিছুটা ভরসা খোঁজার চেষ্টায়। তারপর বলে,
“আমি পাপ, পূণ্য মানিনা আর্ যদি আপনাকে ভালোবাসলে যদি পাপ হয়, আমি এ পাপ বারবার করতে রাজি, আর্ হ্যাঁ, আমি এখনো কারো অর্ধাঙ্গিনী হয়নি, সুতরাং আমাকে নগ্ন দেখার অধিকার কাউকে দিয়নি, আর্ দেবও না, শুধু আপনাকেই দিয়েছি যেদিন থেকে আপনি আমার মন চুরি করেছেন, আর্ যদি আমার সতীত্ব নিয়ে আপনার মনে সংশয় থাকে, আর্ তার জন্য আমাকে স্বীকার করতে পিছুপা হচ্ছেন তাহলে আমি এখনই আমি প্রমাণ দিতে পারি”, বলে বিদ্যুৎমালা নিজের কাঁধ থেকে কাপড় খুলতে থাকে, কাপড়ের একটা অংশ খুলে আব্বৃত বক্ষ যুগল কে অনাবৃত করে কাপড়ের বাকি অংশ কোমরের সাথে ঝুলতে থাকে, সেটাও যখন খুলতে যাবে সোমাদৃতা, বিদ্যুৎমালার হাত চেপে ধরে, কাপড়ের ঝুলতে থাকা অংশটা আবার তার সঠিক স্থানে রেখে বলে,
“এই পাগল, তুমি কিসব বলছো, আমি তোমার সতীত্ব নিয়ে কেনো সংশয় করবো, তোমার পবিত্রতা পরীক্ষা করার আমি কে, তুমি শুদ্ধ ও নিষ্ঠা ভরে আমায় ভালবেসেছ এর থেকে বড় প্রমাণ আর্ কি হতে পারে, কিন্তু তুমি…..”, কথা শেষ করতে না দিয়ে বিদ্যুৎমালা বলে উঠে,
“কোনো কিন্তু না, বলুন আপনি আমাকে স্বীকার করবেন কিনা, আর যদি না করেন তারও বিকল্প আছে”
সোমাদৃতা বুঝতে পারে এই মেয়ে সেও ভালোবেসে ফেলেছে, আর অস্বীকার করা সম্ভব নয়, আর্ জন্যও সে তার অন্ন দাতার বিরোপ যেতে প্রস্তুত।
বিদ্যুৎমালাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে, “বিদ্যুৎমালা আমি শুধু তোমার, শুধুই তোমার”।
এমন সময় তারা পাথরের ওপরে করো পদধ্বনি শুনতে পাই। ওরা আবার পৃথক হয়ে যায়। পাথরের ওপাশ থেকে আপাদমস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে একজন বেরিয়ে এলো, তাকে দেখে বিদ্যুৎমালা, সোমাদৃতার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো ভয়ে। সোমাদৃতা কোমরে গোঁজা ছুরি বের করে হাতে শক্ত করে ধরলো। এবার সেই ব্যক্তিটি চাদরের ঢাকনা মুখ থেকে সরিয়ে দিতেই সোমাদৃতা চমকে উঠলো,
“সেনাপতি অর্জুন বর্মা…..আপনি….?”
চলবে……….

মন্তব্যসমূহ