Disclaimer :- This story inspired by novel same name "তুঙ্গভদ্রার তীরে" by Saradindu Bandopadhyay. All characters are fictional if there any similarlities is purely co-incidence
দ্বিতীয় পর্ব
পরদিন সকালে নাগেন্দ্রহরি সৈন্য নিয়ে অতিথিদের খুঁজতে লাগলেন। সে নিজে একটা ছোট ডিঙি নিয়ে নেমে পড়লেন জলে।
কিছুক্ষন খুঁজার পর সে ওই দ্বীপের কাছে আসতে দুটি আবছা মূর্তি তার নজরে এলো। সে এগিয়ে গেলো সেদিকে কাছে গিয়ে দেখলো দুটি নারী মূর্তি পাশাপাশি শুয়ে আছে। তার প্রথমে চোখ পড়লো বিদ্যুৎমালার উপর।
নাগেন্দ্রহারি ওপরে ওপরে যতই ভ্রাতা সুলভ আচরণ করুক কিন্তু মনে ঠিক লুকিয়ে আছে এক গোপন ঈর্ষার বিষ। তার চোখ অর্ধ নগ্ন বিদ্যুৎমালার উপর পড়তে, সেই ঈর্ষায় যেনো ঘি আহুতি হলো। সে বুঝতে পারলো এই হলো বিজয়নগরের ভাবি রানী। রাজ সিংহাসনের লোভ এর সাথে আর একটি লালসা চেপে বসলো। এরপর তার চোখ পাশের নারী মূর্তির উপর, তার চোয়াল শক্ত দেখে ধরে ফেললেন এ একজন অনার্য ক্ষত্রিয় নারী।
গলা খাকরানি দিতে বিদ্যুৎমালার ঘুম ভেঙে উঠলো সঙ্গে উঠলো সোমাদৃতাও।
নাগেন্দ্রহরী বিদ্যুৎমালার দিকে ঘুরে বললো, “দেবী মার্জনা করিবেন, আপনিই কি বিজয়নগরের ভাবি নারী?”
বিদ্যুৎমালা মাথা কাত করলেন।
নাগেন্দ্রহরী আবার বললো, “কিভাবে আপনি এখানে এলেন আর্ ইনি কে?”
বিদ্যুৎমালা স্ববিস্তরে সব ঘটনা বললো, নাগেন্দ্রহরী একবার একবার বিদ্যুৎমালা আর্ একবার সোমাদৃতার দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনলেন।
তারপর হাত বাড়ালেন বিদ্যুৎমালাকে নৌকায় তোলার জন্য। নাগেন্দ্রহরীর শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো বিদ্যুৎমালার স্পর্শে।
নাগেন্দ্রহরী তাচ্ছিল্যের সুরে সোমাদৃতাকে বললেন, “এসো উঠে এসো নৌকায়”।
তিনজনে ডিঙিতে করে আবার বড়ো নৌকায় ফিরে আসলো। ময়ূরপঙ্খী নৌকায় এসে দেখলো মনিকঙ্গণা নৌকার পাটাতনে দাঁড়িয়ে উঠসুক মনে জলের পানে চেয়ে আছে।
বিদ্যুৎমালা, মনিকঙ্গণাকে জড়িয়ে ধরে। কান্নায় দুজনের চোখ ভরে উঠে।
সাতটি হাতি আর্ তিনটি বড়ো বড়ো পালকিতে করে রাজকন্যাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো, সামনের পালকিতে বিদ্যুৎমালা পরের টায় মনিকঙ্গণা আর্ সর্বশেষে রাজবৈদ্য রসরাজ।
পালকিতে বসে বিদ্যুৎমালা ভাবতে লাগলো, “সত্যিই এ জীবন বড়োই জটিল”।
এবং পিছনের সারিতে সমস্ত সৈন্য ও লোক লস্কর পায়ে হেঁটে বিজয়নগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ওই সারিতে সোমাদৃতাও ছিল, সে ইতঃস্তত ভাবে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। তার পাশের সেনাটি সেটি লক্ষ্য করে বললো, “বলরাম নৌকায় আছে সে নৌকো মেরামত করছে”।
সোমাদৃতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো, এই কয়েকদিনে তার আর্ বলরামের মধ্যে বন্ধুত্ব অনেক প্রখর হয়েছে।
রাজমহলে পৌঁছে রাজা দেব রায় সবার আগে পালকি থেকে অতিথির দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। রজবৈদ্য রশরাজ পালকি থেকে নেমে দেব রায়কে রাজকন্যাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন, বিদ্যুৎমালা একবারও দেব রায়ের দিকে চোখ তুলেও তাকালো না, তার মন শুধু সোমাদৃতার ছবি এঁকে চলেছে, অবকাশ কই আর্ অন্য কাউকে লক্ষ্য করার।
কিন্তু মনিকঙ্গণার মন রাজাকে দেখেই চঞ্চল হয়ে উঠলো। দেব রায়ের সৌম্য গাত্র দেখে মন চাইলো রাজা দেব রায়কে আলিঙ্গন করা।
রাজা সবারই কুশল বার্তা নিয়ে অতিথি সালায় বিশ্রামের আদেশ দিলেন।
সুযোগ বুঝে দেব রায়ের ভাই, নাগেন্দ্রহরী বর্ণনা দিলেন বিদ্যুৎমালা অর্ধ নগ্ন অবস্থায় আর্ সোমাদৃতার কথা বললেন, এতে বাস্তবের থেকে কাল্পনিক রঙ বেশি ছিল। এই সময় দেব রায়ের সেনা প্রধান সেনাপতি অর্জুন বর্মা এসে উপস্থিত হলেন।
অর্জুন বর্মার কোনো দিনই নাগেন্দ্রহরীর মতিগতি ভালো লাগেনি। সে জানে নাগেন্দ্রহরীর মনে সিংহাসনের ঈর্ষা আছে।
নাগেন্দ্রহরী প্রস্থান করলে দেব রায় অর্জুন বর্মার দিকে তাকালেন, অর্জুন বর্মা বললো, “মহারাজ, আমি অর্ধেক কথা শুনে কিছুটা আন্দাজ করেছি, কিন্তু তার থেকে বরঞ্চ আপনি সোমাদৃতাকে ডেকে আসল ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করুন”।
অতএব সোমাদৃতার ডাক পড়লো রাজগৃহে। রাজা দেব রায় তাকে বিদ্যুৎমালার উদ্ধার কার্যের বর্ণনা চাইলেন। সোমাদৃতা কিছু মাত্র বিচলিত না হয়ে আপন মনেই সম্পূর্ণ বিবরণ দিতে লাগলেন। সব শুনে রাজা কিছুটা স্বস্তি পেলেন।
দেব রায় বললেন, “ওহ তুমি তাহলে কলিঙ্গ প্রদেশ থেকে এসেছো, সেনা হয়ে?”
সোমাদৃতা বললো, “না মহারাজ আমি এসেছি…….”, বলে পূর্বে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা রাজা দেব রায়কে বললো।
দেব রায় শুনে খুশি হলেন যে এই মেয়ে অতদূর থেকে এসে শুধুমাত্র বিজয়নগরের সেনাতে যোগ দেওয়ার জন্য, সোমাদৃতাকে এক বটুয়া সর্ণ মুদ্রা দিয়ে বলল, “ধন্য হে নারী, তোমার মতো পরাক্রমী আমার সেনায় নিয়োগ করা আমার সৌভাগ্য”।
“তা তুমি কোন সেনাতে যোগ দিবে, পদাতিক নাকি অশ্বারোহী?”, প্রশ্ন করলেন সেনা প্রধান অর্জুন বর্মা।
সোমাদৃতা লজ্জা পেয়ে বললো, “সে আমি অশ্বারোহণ করতে পারি, কিন্তু আমি একটি এমন গোপন বিদ্যা জানি যার সাহায্যে ঘোড়ার থেকে বেশি জোরে দৌড়াতে পারি”।
অবাক হয়ে অর্জুন বর্মা আর দেব রায় সোমাদৃতার মুখের দিকে তাকালেন, দেব রায় বললেন, “সে আবার কেমন বিদ্যা?”
“যদি মহারাজ সুযোগ দেন দেখাতে পারি”
“ঠিক আছে কাল ভোরে রজগৃহে আসো তোমার বিদ্যা দেখবো, এখন যাও বিশ্রাম করো তুমি আমার অতিথি আজকে”।
সোমাদৃতা প্রণাম ঠুকে হাসি মনে বেরিয়ে এলো, তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়েছে রাজা তার ওপর কৃপা দৃষ্টি বর্ষণ করেছে। অতিথি সলায় হাসি মুখে গিয়ে লম্বা ঘুমের প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু সে লক্ষ্য করলোনা যে অতিথিশালায় ছাদে দাঁড়িয়ে একজোড়া কোমল চোখ তাকে বারবার অনুসরন করছিল, বিদ্যুৎমালা ছাদে দাঁড়িয়ে সোমাদৃতাকে দেখছিল, ভেবেছিল তার প্রাণের প্রিয় একবার হয়তো তার দিকে তাকাবেন, কিন্তু না
সোমাদৃতা একবারও বিদ্যুৎমালা দিকে তাকালোনা। বিদ্যুৎমালার খানিকটা অভিমান হলো। সে চঞ্চল মনে ভিতরে প্রবেশ করলো।
এদিকে রাজা দেব রায় আর্ অর্জুন বর্মা পরামর্শ করলেন যে এ বিষয়ে রাজগুরু অগ্নি সেনের সাথে কথা বলবেন।
অগ্নি সেন সব শুনে বললেন, “দেখো যেহেতু এক অনার্য নারী তোমার ভাবি স্ত্রীকে স্পর্শ করেছে, আর্ অনার্যদের মধ্যে সমকামিতা প্রখর, সুতরাং কি উদ্দ্যেশে সে তোমার স্ত্রী কে স্পর্শ করেছে সেটা বলা মুশকিল। সুতরাং তোমার স্ত্রীকে একটা ব্রত পালন করতে হবে তিনমাস তবেই এই অশুচি ধুর হবে, ততদিন বিবাহ পিছিয়ে দাও, রোজ সকালে পম্পা সরোবরে স্নান সেরে পম্পা দেবীর পুজো দিতে হবে তোমার হবু স্ত্রীকে”।
রাজা দেব রায় হাতজোড় করে বললেন, “যথা অজ্ঞা গুরুদেব”।
বিদ্যুৎমালা তার তিনমাস বিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে শুনে বেশ আনন্দিত হলো, মনে মনে স্থির করলো এই তিন মাসে সে সোমাদৃতাকে তার কাছে ধরা দিতে বাধ্য করাবেই।
পরদিন সকালে সোমাদৃতা বেরোলো নগর পরিদর্শনে এদিকে বিদ্যুৎমালাও বেরোলো প্রথা অনুযায়ী পম্পা দেবীর পুজো দিতে।
যখন পম্পা সরোবরে স্নান করে ভেজা বস্ত্রে বিদ্যুৎমালা পম্পা দেবীর পুজো দিতে যাচ্ছিলেন তখন দেখা হলো সোমাদৃতার সাথে। সোমাদৃতা থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো ভেজা বস্ত্রে বিদ্যুৎমালাকে দেখে। ভেজা কাপড় বিদ্যুৎমালার শরীরে এমন ভাবে বসে আছে যেনো প্রত্যেক ভাঁজের সঠিক অবস্থান বর্ণনা করতে চায়। সোমাদৃতা একবার পুরো শরীরটা ভালো ভাবে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো। বিদ্যুৎমালা মৃদু হেঁসে সোমাদৃতার
কাছে এগিয়ে গেলো, এখনো সোমাদৃতা চোখ বন্ধ করে আছে।
বিদ্যুৎমালা বললো, “কি ব্যাপার চোখ বন্ধ করে আছেন কেনো?”
“রাজকুমারী আপনি এখন সঠিক বস্ত্রে নেই, আপনাকে এভাবে দেখলে আমার মনে পাপ লাগবে”।
“কেনো আমি কি দেখতে এতই খারাপ যে আপনি আমায় অবহেলা করছেন, আর্ রাজকুমারী বলছেন কেনো বিদ্যুৎমালা বলতে পারেন না”, অভিমানী সুরে বলল বিদ্যুৎমালা।
সোমাদৃতার ঠোঁটের কোণে একটা ছোট হাসির রেখা দেখা দিলো। অভিমানী সুর কি শুধু অভিমানের নাকি অন্য কিছু।
সোমাদৃতা আস্তে আস্তে চোখ খুললো, সামনে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎমালা, ভেজা চুলে এখনো ফোঁটা ফোঁটা জল ধরে আছে। যেনো স্বর্গের অপ্সরী লাগছে। সোমাদৃতার চোখ বিদ্যুৎমালার বুকের ওপর পারলো, স্তন যুগলের ওপর থেকে কাপড়টা সরে গেছে উনমুক্ত করে খাঁজ। বিদ্যুৎমালা সেটা লক্ষ্য করলো, কিন্তু কিছু বললোনা, তার গাল লাল হয়ে গেল লজ্জায়, শুরু হলো বুকের দ্রুত ওঠানামা। কিছুক্ষন পর সোমাদৃতার ঘোর কেটে গেলো, ছি সে রাজার হবু স্ত্রী নিয়ে কি এইসব নোংরামি ভাবছে। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে গেলো সে আর্ এক দণ্ড সেখানে না দাঁড়িয়ে হনহন পা চালিয়ে দিল। অনেকবার বিদ্যুৎমালা ডাকলেও ফিরে তাকালোনা।
এদিকে বিদ্যুৎমালা মনে মনে বললো, “ওষুধে কাজ হচ্ছে, দেখবো ক্ষত্রিয় নারী তুমি কতদিন আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাও, তোমাকে ধরা দিতেই হবে”।
এই ভেবে বিদ্যুৎমালাও চলে গেলো পম্পা দেবীর পুজো দিতে।
চলবে…..!

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন