Part 4 and Last
শেষে মস্তিষ্কের কাছে পরাজিত হয়ে এক ঝটকায় দীপ্তিকে ধাক্কা মেরে খাটে শুয়ে ফেলে একবার নয় দুবার নয় পরপর তিনবার গলায় স্ক্রু ড্রাইভারটা বসিয়ে দিলাম, রক্ত ফিনকি ছুটে আমার সাদা জামাটা রাঙা করে দিল। দীপ্তি শেষ আর্তনাদ টুকুও বেরোলো না, শুধু একপ্রকার ঘড়ঘড় শব্দ দীপ্তির মুখ থেকে শোনা গেলো। আমি এবার ভয়ে কুকড়ে উঠলাম, স্ক্রু ড্রাইভারটা দীপ্তির গলায় উপপতির মতো বসে রইলো। আমি প্রিয়ার দিকে ঘুরে দেখলাম প্রিয়া চোখ বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, রক্ত ছিটকে প্রিয়ার মুখের ওপর পড়েছে। আমি প্রিয়ার হাতের বাঁধন খুলে প্রিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। মনের মধ্যে ভয় আর আনন্দ এই দুইয়ের তালগোল পাকানো রূপ খেলা করতে লাগলো।
“আমরা এবার মুক্ত প্রিয়া, তুমি শুধুমাত্র আমার, আমি তোমাকে আবার আমার করে নিয়েছি, কেউ পারবে না আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে”, প্রিয়ার গায়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম আমি।
“চলো প্রিয়া আমরা এখান থেকে অনেক দুরে কোথাও চলে যায় যেখানে কেউ আমাদের মাঝে আসবে না”।
প্রিয়া ছোট্ট হূম বলে দীপ্তির দিকে চেয়ে রইল। আমি প্রিয়ার মুখ আমার দিকে ঘুরিয়ে ওর ঠোঁটে গভীর চুম্বন এঁকে দিলাম।
প্রিয়াকে জামাকাপড় পরিয়ে ওর হাত ধরে নরকের যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে এলাম। সঙ্গে স্ক্রু ড্রাইভারটা নিলাম যাতে পুলিশ পড়ে মার্ডার ওয়াপেন খুঁজে না পাই।
যখন ঐ পোড়া বাড়ি থেকে বেরোলাম তখন পুর্বা আকাশ ফর্সা হয়েছে। পাখির কিচিরমিচির জানাচ্ছে নতুন দিনের সুভারাম্ভের কথা। ঠিক আমরাও যেনো এইরকমই একটা নতুন দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।
প্রিয়াকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে শেষবারের মতো বাড়িটার দিকে তাকালাম। শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেড়ে গাড়িতে উঠেপড়লাম। প্রিয়া কোনো কথা বললো না। এখনো হয়তো মাথার মধ্যে সবকিছু ভাবতে পারছেনা। সময় লাগবে!
আমি গাড়ি ছেড়ে ঘুরিয়ে দিলাম হাওড়ার দিকে। গাড়ির গতির কাঁটা থরথর করে কেঁপে উঠছে যতবারই প্যাডেলে চাপ দিচ্ছি। সমস্ত রাস্তাটা যেনো চোখের পলকে পার করতে চাই।
হাওড়া ব্রিজে পৌঁছলাম তখন পুব আকাশে একফালি সূর্য চারিদিক মৃদু আলোয় উদ্ভাসিত করে তুলেছে। বেশ মিঠে লাগে ভোরের আলো। ব্রীজে তখন দু – একটা লোকের সমাগম লেগেছে। গাড়িটা একধারে দাঁড় করিয়ে বেরিয়ে এলাম ব্রীজের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে গঙ্গার দিকে চেয়ে রইলাম। দু – একটা জাহাজ কাছে দূরে নোঙ্গর ফেলেছে। গঙ্গা নিজের মতোই কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই বয়ে চলেছে। অনেক্ষণ একই ভাবে রইলাম।
প্রিয়া যে কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে টেরেই পায়নি। প্রিয়ার গলার স্বরে বাস্তবে এলাম।
“মানুষ কত সার্থপর বলো?”, প্রিয়া বললো গঙ্গার কালো জলের দিকে তাকিয়ে।
“হুম!”, আমি বললাম
“আমরা কি সত্যিই নতুন ভাবে সব শুরু করতে পারবো?”
“জানিনা প্রিয়া, তবে আমরা চেষ্টা করি দেখি পারি কিনা”
“কিন্তু প্রিয়, তখন প্রত্যেকটা রাত যে আমি একটু একটু করে শেষ হয়ে যাবো, পারবে আমায় সামলাতে?”
“কেনো পারবোনা, তুমি আমার সব, তোমাতেই আমি”
“না প্রিয়, আমি পারবোনা এই শরীরের প্রত্যেক অঙ্গে অঙ্গে বিষে পরিপূর্ণ, তুমি পারবে না সইতে”।
“প্রিয়া এরকম বলছো কেনো, মানুষ কিনা পারে বলো আমারও পারবো বলো, এতদূর যখন এসেছি, তখন আরো পথ হাঁটতে অসুবিধা কি”।
“এই কয়েকদিনে দীপ্তি আমার দেহকে অপমান করেছে, তোমার ভালোবাসাকে তার পাশবিকতা দিয়ে ছিন্ন করে দিয়েছে, আমি আর পারবোনা সেই জায়গাটা দিতে”।
আমি হতাশা ভরা চোখে প্রিয়ার দিকে চাইলাম বললাম, “কি চাও তাহলে বলো”
“চলো গঙ্গায় জল সমাধি নিই। শুনেছি গঙ্গায় সব পাপ ধুয়ে দেয়, চলো ঝাঁপ দিই এই পাপের জগৎ থেকে”।
“কি বলছো তুমি প্রিয়া, আত্মহনন ভীতুরা করে, আমরা প্রান্তিক মানুষ হয়ে এরকম করলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যে টিকতে পারবে না”।
“প্রিয় আমার ভাবনা শুধু তোমাকে ঘিরে, তুমি আমার বর্তমান, ভবিষ্যত সবই। কিন্তু আমি না পারবো তোমায় ছাড়া বাঁচতে না মরতে এ শরীরে তোমারই বাস”।
“একটু সময় দাও আমাকে”।
সমস্ত পুরনো দিনের কথা একে একে ভীড় করতে লাগলো মনের মধ্যে বাবা মার কথা, প্রথম প্রেম প্রিয়ার কথা, সব শেষে একটা প্রশ্ন মাথায় খোঁচা দিলো “আমি কি পারবো করো মৃত্যুর দায়ী হয়ে, এখনো দীপ্তির লাশ বাড়িতে পড়ে আছে, পারবো সারা জীবন কলঙ্ক বইতে, পারবোনা?”
আমি প্রিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম, “চলো”।
প্রিয়া আমার দিকে ঘুরে গালে হাত রেখে একটা শুষ্ক হাসি দিলো। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো অনেক্ষণ। তারপর আমার ঠোঁট গভীর চুম্বনে ভরিয়ে দিলো, আজ আর লোক লজ্জার ভয় মনে ধরলো না। তারপর প্রিয়ার হাত ধরে রেলিং টপকে ঝাঁপ দিলাম, গঙ্গায়। সব পাপ আজ ধুয়ে যাবে, শুরু হবে আবার দুটি প্রাণের আবার তারা লিখবে সমপ্রেমের গল্প। শেষ বারের মতো প্রিয়ার দিকে তাকালাম সে আমার দিকে সজল চোখে তাকিয়ে। বুঝতেই পারলাম না কখন সলিল সমাধি ঘটলো। সবকিছু অন্ধকার
প্রিয়া আর প্রিয়দর্শিনীকে তথাকথিত আইন মারেনি মারলো এই সমাজ যেখানে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, “সমাজ কি বলবে?” আর শেষ প্রশ্ন, “আমি কে?”

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন