Disclaimer :- This story inspired by novel same name "তুঙ্গভদ্রার তীরে" by Saradindu Bandopadhyay. All characters are fictional if there any similarlities is purely co-incidence
প্রথম পর্ব
এ কাহিনীর প্রেক্ষাপট, যখন সারা ভারতে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল জলপথ। তখনও দেশে বর্গীরা হানা দেইনি, অর্থাৎ তখন দুটি জাতি প্রাধান্য ছিল এক আর্য আর অন্যটি অনার্য। এর মানে তখন জাতিভেদ প্রথা প্রগাঢ় হয়েছিল। অনার্যরা ছিল নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ, ছিল তাদের মধ্যে সবার সমান অধিকার, নারী পুরুষ লিঙ্গ ভেদ তখন নজরে আসতনা। অনার্য রাজারা দেশ চালাতে আর প্রজারা ছিল বেশ সুখেই। তখন রাজার সেনাবাহিনীতে উভয় নারী পুরুষ যোগ দিতে পারতো। শুধু তাদের জাত যেনো ক্ষত্রিয় হয়। উচু জাতের নারীরা শুধু লেখাপড়ায় সিদ্ধহস্ত হতেন। সুতরাং এর থেকে বলায় যায়, যে প্রান্তিক যৌনতা অনার্যদেরই দান। অর্থাৎ সমকামিতা সেই অনার্যদের আমল থেকেই চলে এসেছ। এর প্রতিদান এখনো দুএকটা ভঙ্গ মন্দিরের কারুকার্যে ফুটে আছে।
এরপর আর্যদের ভারতে প্রবেশ ঘটে, শুরু হয় আর্য, অনার্য যুদ্ধ। আর্যদের চিন্তাশক্তি, চলকাপট আর্ বাহুবলের কাছে বারবারই অনার্য পরাজিত হতে লাগলো, এমনই এক যুদ্ধ হলো কলিঙ্গ প্রদেশের সাথে বিজয়নগরের। কলিঙ্গ প্রদেশের রাজা ভানুপ্রতাপ ছিলেন অনার্য আর্ বিজয়নগরে দেব রায় আর্য। চিরাচরিত প্রথার মতো এবারও ভানুপ্রটাপ হারলেন, সন্ধি স্থাপন হলো ভানুপ্রতাপের বড়ো কন্যা বিদ্যুৎমালার সাথে দেব রায়ের বিয়ে। এইভাবে এনিয়ে দেব রায় চতুর্থবার বিয়ে করবেন।
কৃষ্ণা আর্ তুঙ্গভদ্রা নদীর সঙ্গম স্থল থেকে কিছু আগে তিনটি নৌকো আগু পিছু ভাবে চলছে।
তারা এবার তুঙ্গভদ্রায় নামবে, তাদের লক্ষ্য সত্তর ক্রোশ দূরের বিজয়নগর। এরা এসেছে বহুদূর থেকে কলিঙ্গ প্রদেশের বন্দর থেকে, গত চার সপ্তাহ থেকে অহরহ নৌকাগুলো তাদের দাঁড় বইছে। আর এক সপ্তাহ এর মধ্যেই বিজয়নগরে পৌঁছাবে এই নৌকাগুলো তাদের গন্তব্যে। সামনের নৌকাটি বৃহৎ, মৌরপাঙ্খি নৌকো। নৌকার পালে নীল রং সামনে ও পিছনের দিকে নীলের কারুকার্য। পরের নৌকাটি অপেক্ষাকৃত ছোট মকরমুখী, এতে বিশেষ কারুকার্য নেই। এর মধ্যে আছে পঞ্চাশ জন নৌসেনা, রক্ষী আর্ কিছু দাঁড় টানবার মজুর। নৌবহর সাজানো। পরেরটি সবার থেকে ছোট, গতিও মন্থর এর রান্নার সরঞ্জাম, পাচক, পাচিকা আর্ কিছু প্রয়োজনীয় নিত্যদ্রবের ভান্ডার, চার সপ্তাহ ধরে নৌকাগুলো বয়ে চলেছে পেটের জোগান তো রাখতেই হবে।
সামনের নৌকার ছাদের পাটাতনে দাঁড়িয়ে আছে দুটি নারী মূর্তি। একজন কলিঙ্গ রাজ্যের বড়ো রাজকুমারী বিদ্যুৎমালা আর্ অন্যজন তারই বোন মনিকঙ্গণা। এদের সঙ্গে আরও একজন সঙ্গী আছেন তিনি বৃদ্ধ রাজবৌদ্য রসরাজ তিনি এখন নিজের কক্ষে বিশ্রামরত।
বিদ্যুৎমালা উদাস মনে কাঠের পাটাতনের ওপর দাঁড়িয়ে সামনের চঞ্চল জলরাশিকে একমনে চেয়ে আছে। তার চোখ দুটি শ্রান্ত, চোখের মণি প্রগাঢ় কালো, চোখ দুটি দিকে অনেক্ষণ চেয়ে রইলে বোঝা যায় এর স্নিগ্ধ কালো চোখের ভিতরে আরো একটা আবরণ আছে যাকে বোঝা সহজ মানুষের কাম্য নয়। বিদ্যুৎমালা তন্বী, শরীরের রঙে এক প্রানবন্ত উজ্জ্বলতা আছে, সবাইকে আকর্ষণ করার এক শক্তি আছে। যৌবনের উচ্ছাসকে ঠিক নিজের আবরণ দিয়ে ঢেকে রেখেছে। অপরদিকে মনিকঙ্গণা এর ঠিক উল্টো সে তন্বী নয়, যৌবনের উচ্ছাস ধরে পারেনি, নয়ন দুটি সমুদ্রের জলরাশির মতো চঞ্চল নতুন কিছুকে সবসময় দুহাত ভরে গ্রহন করতে প্রস্তুত। সে বিদ্যুৎমালার এতো উজ্জ্বল নয়, সে একটু চাঁপা, কিন্তু মুখমণ্ডলের এক আলাদা আভা আছে, ঠোঁট দুটো গোলাপের রক্তিম আভার মতো লাল। এরা দুবোন হলেও এদের মা আলাদা। ভাণুপ্রতাপ দুবার বিবাহ সম্পন্ন করেছেন।
অনেক্ষণ একই ভাবে বিদ্যুৎমালার চেয়ে থাকা দেখে মনিকঙ্গণা বললো, “কিরে, তুই এমন উদাস মনে কি ভাবছিস?”
“কিছুনা”, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো বিদ্যুৎমালা।
“তোর বিজয়নগরের রাজার সাথে বিয়ে হচ্ছে এর থেকে আর্ ভালো খবর কিছু আছে”।
“এটাকে তোর আনন্দ করার মতো মনে হয়, তুই রাজনীতির কূটনীতি বুঝলি নারে মনি। এটা শুধু নিজের রাজ্য বাঁচানোর একটা ভেট মাত্র, একে কি করে বিয়ে বলে মানি বল”।
“শুনেছি মহারাজা দেব রায় যেমন সাহসী তেমনি গুণী, আচার ব্যবহার এ তুলনা নেই, দেখবি ঠিক তোর মন জয় করে নেবে”, বললো মনিকঙ্গণা।
“যার তিন তিনটে আগে থেকে বউ আছে তাকে কি আপন করা যায়”, ধরা গলায় বললো বিদ্যুৎমালা তারপর আবার বললো, “আচ্ছা ধর মহারাজা আমার সাথে যদি তোকেও স্বীকার করেন তখন কি তাকে ভালোবাসতে পারবি?”
“হ্যাঁ, কেন পারবোনা, যে আমার স্বামী হবে তাকে আমার মন প্রাণ দিয়ে অবশ্যই বাসবো”।
“সত্যিই, যদি আমি তোর মতো হতে পারতাম”, বলে বিদ্যুৎমালা আবার সেই উচ্ছাস জলরাশির দিকে চেয়ে রইলো।
সূর্য এখন মাঝ আকাশ থেকে আস্তে আস্তে পশ্চিমের দিকে ঢলতে লেগেছে। সন্ধ্যার চাদর আস্তে আস্তে চারিদিক যেনো ঢেকে দিচ্ছে। একটা স্মিতা হালকা আভা এখনো চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। মনিকঙ্গণার দুটি চোখ হটাৎ করে কৃষ্ণা আর্ তুঙ্গভদ্রার সঙ্গম স্থলে কিছু একটা নড়তে চড়তে লাগলো। মনিকঙ্গণা আরো ধারের দিকে এগিয়ে এলো। বুঝতে পারলো একটা মানুষ জলে হাবুডুবু খাচ্ছে, হাতে দুটো শক্ত লাঠি ধরে রেখেছে তাতে কোনো রকমে ভেসে আছে। মানুষটিকে নারী না পুরুষ বোঝা গেলো না। মনিকঙ্গণা ছুটে দৌড়ে নীচে গিয়ে শঙ্খ বাজাতে বাজাতে উপরে উঠে এলো। তখনকার দিনে শঙ্খ বাজিয়েই বিপদের অগ্রিম বার্তা জানানো হতো। পিছনে থাকা নৌকাটি থেকে সবাই বেরিয়ে এলো নৌকার পাটাতনের উপর, তারও ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো। তাদেরই মধ্যে একজন জলে ঝাঁপ দিল। সে তীর বেগে এগিয়ে গেলো ওই ডুবন্ত মানুষটার দিকে। কিছুক্ষন পরে তাকে টেনে তোলা হলো বড়ো নৌকায়। এবার স্পট বুঝা গেলো মানুষটি হচ্ছে একজন নারী। অনেক্ষণ জলে থাকায় মুখের রঙ ফেকাসে হয়ে গেছে। কিন্তু ভেজা আবরণের ভিতর থেকেও এক লাস্যময়ী শরীরের অবয়ব ফুটে উঠেছে। চোয়াল শক্ত দেখে মনে হয় ক্ষত্রিয় বংশের কোনো নারী। গায়ের রঙ সামান্য বাদামি। যে লোকটা ওকে জল থেকে টেনে তুলেছিল সে মেয়েটির পাশে বসে নাড়ি দেখলো চলছে কিন্তু খুবই মন্থর। রসরাজ বুঝতে পেরে বললেন, “দাঁড়াও আমি ওষুধ দিচ্ছি” বলে ভিতরে নিজের কক্ষে গেলেন। এরই ফাঁকে বিদ্যুৎমালা ওই লোকটিকে প্রশ্ন করলো, “তোমার নাম কি?”
“লোকটি হাত জড়ো করে বললো, “আজ্ঞে অধমের নাম বলরাম”
বিদ্যুৎমালা আর্ কিছু না বলে নৌকার পাটাতনে শুয়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকালো নিজের অজান্তেই মন বলে উঠলো, “আহারে, কত কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা”।
এরই মধ্যে রসোরাজ হাতে ওষুধ নিয়ে ফিরে এসে বলরামের হাতে দিল। বলরাম হাত থেকে নিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে বসে ওষুধটা খাইয়ে দিল নারীটিকে। প্রায় আধা ঘন্টা পর চোখ মেলে তাকালো মেয়েটি। উঠেই এদিক ওদিক তাকালো, চোখ গিয়ে পড়লো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিদ্যুৎমালার ওপর। বিদ্যুৎমালাও ওর চোখের দিকে চেয়ে থাকার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলনা চোখ নামিয়ে নিতে হলো। এবার বলরাম প্রশ্ন করলো, “মা, তোমার নাম কি? তুমি জলে ভাসছিলে কেনো?”
মেয়েটি কিন্তু কিছুই বললো না একমনে বিদ্যুৎমালার দিকে চেয়ে রইল।
রসোরাজ বললেন, “আহা এখন এতো প্রশ্ন করো না, ও খুবই ক্লান্ত, তোমাদের নৌকায় নিয়ে যাও, আগে গরম ভাত পেতে দাও তারপর নাহয় ওকে প্রশ্ন করো”l
বলরাম আর্ কোনো কথা না বলে প্রণাম ঠুকে মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেলো, বিদ্যুৎমালা মেয়েটির চলে যাওয়া দিকে চেয়ে রইলো।
রাত এগিয়ে মধ্যে রাতে পরিণত হলো, তিনটি নৌকায় সবাই ঘুমিয়ে শুধুমাত্র মাঝের নৌকায় দুজন ছাড়া। বলরাম আর্ সেই মেয়েটি পাশাপাশি বসে আকাশে পানে তাকিয়ে বসে ছিল। বলরাম বললো, “বলো তুমি, কিভাবে এতদূর ভেসে এলে বা তোমার নাম কি?”
মেয়েটি আকাশের পানে চেয়ে থেকেই বললো, “আমার নাম সোমাদৃতা বর্মা”
বলরাম মনে মনে বললো, “বা বেশ মিষ্টি নাম তো” কিন্তু মুখে বললো, “তুমি এতদূর এলে কিভাবে?”
সোমাদৃতা এবার আকাশ থেকে মুখ নামিয়ে মাথা নীচু করে বলতে লাগলো, “আমরা অনার্য ক্ষত্রিয়, ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার থেকে অস্ত্র বিদ্যায় বেশি ভালো লাগলো, আরো নিপুণ হতে লাগলাম, এমন সময় বহিরাগত আমাদের রাজ্য আক্রমণ করলো, আমার বাবা আর্ আমাকে ধরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো। আমার বাবা বললেন এখান থেকে সোজা বিজয়নগর যেতে, সেখানে সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে। সব কিছু ঠিক করে ওঠার আগেই ওরা বাবাকে ধরে ফেললেন আর আমি নদীতে ঝাঁপ দিলাম আর্ বাকিটা আপনারা জানেন”, এই বলে থামলো সোমাদৃতা বর্মা।
মাথা নিচু করে এতক্ষণ শুনছিল বলরাম, এবার মুখ তুলে সোমাদৃতার মুখে তাকালো। তারপর সোমাদৃতা বললো, “অনেক হলো আমার কথা এবার তোমার বিষয়ে বলো”
বলে সোমাদৃতা কাঠের পাটাতন এর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল।
এবার বলরাম শুরু করলো, “আমার বাড়ি বাংলার বর্ধমানে। সেখানে কোনো উন্নতি হচ্ছে দেখে শেষে দেশ ছাড়লাম। আর আমি কামার যুদ্ধ চলাকালীন এখানে এসে দু এক পয়সা করলাম, এবার বিজয়নগর যাচ্ছি সেখানেই আবার জেঁকে বসবো। আর শুনেছি রাজা দেব রায় সজ্জন ব্যক্তি, তার নজরে আস্তে পারলে আমার মঙ্গল হবে”, এতদূর বলে পাশ ফিরে ঘুরে তাকালো বলরাম কিন্তু পাশ ফিরে দেখল সোমাদৃতা ঘুমিয়ে পড়েছে। মুখটা একবারে নিষ্পাপ শিশুর মতো লাগছে।
বলরাম মনে মনে বললো, “আহারে, এই একরত্তি মেয়েটা এইটুকু বয়সে কত কিছুর উপর দিয়ে হাঁটছে”।
বলরাম নিজের গায়ের চাদরটা খানিকটা সোমাদৃতার গায়ে শুয়ে পড়লো। সত্যিই তো কতোই বয়স হবে সোমাদৃতার বলরামের থেকে বছর দশের ছোট।
বড়ো নৌকার একটি কক্ষে দুই বোন শুয়ে আছে, এর মধ্যে বড়ো বোন বিদ্যুৎলতা স্বপ্ন দেখলো তার স্বয়ম্বর সভা হচ্ছে তাতে একে একে রাজকুমাররা মাছের চক্ষু ভেদ করার চেষ্টা করছে কিন্তু কেউ পড়ছে না, শেষ পর্যন্ত অর্জুন এসে লক্ষ্য ভেদ করলো আর্ রাজকুমারী তার গলায় বরমাল্য দিলেন।
পরদিন সকালে রাজবৈদ্র, সোমাদৃতাকে ডেকে পাঠালেন। সোমাদৃতা এলো সঙ্গে দুজন রক্ষীও এলো।
রসরজ প্রস্না করলেন তার পরিচয় নিয়ে, সোমাদৃতা নিজের দুর্ভাগ্যের কথা জানলো।
উপরে ছাদে দাঁড়িয়ে সব কথাই শুনলো বিদ্যুৎমালা। মনে খানিকটা ব্যাথা অনুভব করলো।
রদরাজ বললেন, “ঠিক আছে, তুমি আমাদের সাথে বিজয়নগর আসতে পারো আমরা সেখানেই যাচ্ছি”।
সোমাদৃতা যাবার উপক্রম করলে বিদ্যুৎমালা নীচে নেমে এলো, ওদের চোখাচোখি হলো, রাজকুমারীকে দেখেই সোমাদৃতা মাথা নীচু করে অভিবাদন জানলো। কিন্তু বিদ্যুৎমালার
শরীরে অন্য রকম অনুভুতি কাজ করলো।
পরদিন বিকালে তিনটি নৌকা পরপর ভিড়লো বিজয়নগরের বন্দরে। কিন্তু মেঘের মুখ ভার। বন্দরে আগে অথিতি আপ্যায়নের লোকজনও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যখন বিদ্যুৎমালা বন্দরের সিড়িতে পা দিলো মৃদু মন্দ বইতে থাকা বাতাস হটাৎ ঝড়ের রূপ নিলো। তুঙ্গভদ্রার জল ফুলে একটা দমকা হাওয়াই তিনটি নৌকা পরপর কাত হয়ে পড়লো। কে কোথায় ছিটকে পড়ল ঠিক নেই। বিদ্যুৎমালা ছিটকে পড়লো তুঙ্গভদ্রার জলে অন্য একটি নৌকা থেকে সোমাদৃতাও ছিটকে পড়লো জলে। সোমাদৃতা দেখলো রাজকুমারী জলে তলিয়ে যাচ্ছে। সেইদিকে এগিয়ে গেলো সোমাদৃতা। কিছুক্ষন পর বিদ্যুৎমালা একজোড়া কোমল হাত তাকে টেনে উপর দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এর কিছুক্ষনের পরেই সে জ্ঞান হারালো।
যখন তার জ্ঞান হলো তখন সে বুঝতে পারলো একজোড়া চোখ মুখের উপর ঝুঁকে আছে। চোখ দুটি দেখে সে চিনতে পড়লো। তারপর সে জলে ডুবে যাওয়া মুহূর্তের স্মৃতি মনে করলো আর্ বিড়বিড় করলো, “আমি ডুবে যাচ্ছিলাম আমাকে কেউ একজন টেনে তুলেছিল, আর্ এখন আমি কোথায়”
“আমি আপনাকে টেনে তুলেছি রাজকুমারী, আমার নাম সোমাদৃতা বর্মা। আর আমরা মনে হয় কোনো দ্বীপে ভেসে উঠে এসেছি”।
বিদ্যুৎমালা শুধু সোমাদৃতার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো দিয়ে বললো, “চাঁদ উঠেনি আজ?”
“উঠবে রাজকুমারী, কিন্তু সেও মাঝ রাতের পর, আপনি বিশ্রাম করুন ততক্ষণ”
“ততক্ষণ আপনি কি করবেন?”
“আপনাকে পাহারা দেবো”
এই কথাটা শুনে এই জরাজীর্ণ অবস্থাতেও বিদ্যুৎমালা অনেক নিরাপদ মনে করলো নিজেকে।
ওদিকে অথিতি অ্যাপায়ানে থাকা দেব রায় এর ছোট ভাই নগেন্দ্রহরি ঝর থামলে কাউকে খুঁজে না পেয়ে আবার প্রাসাদের দিকে ফিরে গেলেন, দেব রায়কে গিয়ে অশুভ সূচি দিলেন। দেব রায়ের মন ভার হয়ে এলো তিনি সেনা পাহারায় বন্দরকে রাখতে বলে নগেন্দ্রহরিকে বিশ্রাম করতে বললেন।
এদিকে রাজকুমারী বিদ্যুৎমালা ক্লান্ত শরীরে আবারও স্বপ্ন দেখলো, “অর্জুনকে বরমাল্য পরানোর পর অর্জুন নিজের ছদ্মবেশ খুলে বললো, “রাজকুমারী, রাজকুমারী ওই দেখুন চাঁদ উঠেছে”।
বিদ্যুৎমালা চোখ মেলে দেখে সোমাদৃতা আবার তার মুখের সামনে ঝুঁকে তাকে ডাকছে। এবার ওই কাজল কালো চোখ আর্ রক্তিম আভার ঠোঁট আর্ সোমাদৃতার গরম নিশ্বাস নিজের মুখের ওপর পড়তে বিদ্যুৎমালার শ্বাস ভারী হয়ে আসে, শুরু হয় তার বুকের দ্রুত ওঠানামা। সোমাদৃতা সেটা বুঝতে পেরে একটু সরে এসে দাঁড়ায়।
বিদ্যুৎমালার বুঝতে আর্ বাকি রইলনা যে তার স্বপ্নে দেখা অর্জুন আর্ কেউ না সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সোমাদৃতা। সে শেষে রাজকুমারী হয়ে একজন ক্ষত্রিয়র প্রেমে পড়ল, তাও আবার আরেকটি নারীর প্রেমে।
চলবে……….!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন