Part 9
আমি মনে মনে ভয় পেলেও মুখ শক্ত রেখে বললাম, “কি চাই?”
“ওহ, মিস রুজিনা, আপনি ঠিক আমার মতো সব সময় cut to the point, কিন্তু এই দুনিয়া প্রচুর সার্থপর কি বলো ডার্লিং?”, নূরের দিকে ঘুরে ওয়াসিম আকরাম।
“সুতরাং কাজের কথায় আসুন?”, বিরক্ত ভাবে বললাম আমি।
“I want you to work for ISI”, কঠোর গলায় বললো ওয়াসিম আকরাম।
নিজের কানকে অবিশ্বাস মনে হলো, এতো দেখছি শিকার নিজেই শিকারির কাছে ধরা দিচ্ছে, মনে মনে পুলকিত হলেও মুখে কাঠিন্য রেখে কিছুটা অবাক আর কিছুটা ভয় মিশিয়ে বললাম, “কি.. কি..?”
“আমার মনে হয় আপনি ঠিকই শুনেছেন মিস রুজিনা”
“আপনার কেনো মনে হয় আমি আপনাদের সাহায্য করবো?”
“ওহ, come on রুজিনা আমরা কেউই ধোওয়ার তুলসী পাতা না, I know about everything, I know how much you hate Indian army, and how much you love Nafisha”, মুখে রহস্য ময় হাসি রেখে বললেন ওয়াসিম আকরাম চিফ অফ ISI.
এবার আমার একটা বিষয়ে রাগ হলো R&AW চিফ কেনো নাফিসার নামটা গোপন রাখলো না। ওকে ধরে আমার গোপন পরিচয় জানতে কয়েক সেকেন্ডও লাগবে না।
আমি ভীত হবার নাটক করে বললাম, “প্লিজ নাফিসাকে কিছু করবেনা আপনি যায় বলবেন তাই করবো”
“আহা, ভয় পাচ্ছো কেন তোমার কেউ কিছু করতে পারবেনা যতদিন আমার হয়ে কাজ করবে ততদিন রানীর মতো থাকবে।
আর সঙ্গে থাকবে নিশি যাপনের সু ব্যবস্থা”, নূরের দিকে ইশারা করে বললো ওয়াসিম আকরাম।
আমি নূরের দিকে তাকালাম, কেমন একটা হতাশা মেশানো পুরো মুখমন্ডল, কেমন একটা মায়া ভরা দুচোখে। বুঝতে পারলাম, ওয়াসিম আকরাম কার্যসিদ্ধির জন্য প্রায় নূরকে ব্যবহার করে। কি নৃশংস মানুষ। মনে মনে ঠিক করলাম মিশন শেষে নূরকে নিয়ে ভারত পালাবো।
আমার চিন্তায় ছেদ পড়ল ওয়াসিম আকরামের ডাকে, “কি নূরকে পছন্দ হয়নি নাকি আরও নতুন পাঠাবো?”
আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম, “বলুন কি করতে হবে?”
ওয়াসিম আকরাম হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, “কনস্ট্রাকশন সাইটের কাজ এখন delay করান। পরবর্তী টাস্ক পরে পেয়ে যাবেন, চলি, খোদা হাফেজ”;
“খোদা হাফেজ”, বললাম আমি।
মিস্টার আকরাম বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। আমি নূরের দিকে তাকালাম, জল ছলছল করে নূরের চোখ কিন্তু আমি কিছু বলার উপক্রম করতেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো নূর।
আমি দরজা লক করে এসে স্যাটেলাইট ফোনে সংকেত দিলাম, black Panther got her place।
মিস্টার আকরাম সাহেবের কথা অনুযায়ী কনস্ট্রাকশন সাইটের কাজ slow down করে দিলাম। সেদিন থেকে তিনদিন হয়ে গেলো নূরের দেখা পায়নি। মনে একটা ভয় হলো ওয়াসিম জানোয়ার নূরকে টর্চার করছে কি?
চারদিনের দিন নূরকে দেখতে পেলাম আমি বেলকনিতে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছি আর নূর বেরিয়ে এলো সেই ফলের ঠেলাগাড়ি থেকে ফল কিনতে লক্ষ্য করেনি আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। কালো বোরখায় ঠিক শরীরের উজ্জল্য ঠিক ফেটে ফেটে বেরোচ্ছে। সে আমার ঘরের দিকে তাকালো দেখতে না পেয়ে হতাশা হলো, তারপর উপর দিকে তাকাতেই আমাকে দেখতে পেলো। বুঝতে পারলো যে আমি সবই লক্ষ্য করেছি। সে আবার তাড়াহুড়ো করে পালানোর চেষ্টা করলো আমি জোরে ডাক দিতেই চমকে থেমে গেলো।
আমি দৌড়ে নিচে নেমে গেলাম, নূর ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম, “কি ব্যাপার আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো কেনো?”
নূর কিছু বললোনা শুধু চোখ বন্ধ করে রইলো।
আমি বললাম, “কিছু বলবে নাকি চুপ করে থাকবে নাকি আমি চলে যাবো”।
নূর এবার চোখ খুলে বললো, “I am really sorry Rujina, আমার জন্য তোমাকে একটা এতবড়ো সমস্যায় পড়তে হলো”।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম, ও আবার বললো, “আমি তোমাকে নেশা করিয়ে তোমার sex tape বানিয়ে ছিলাম, তোমাকে বলেছিলাম ভালোবাসি কিন্তু তখন বুঝিনি ভালোবাসা কি আর এখন…….!” বলে থেমে গেলো নূর।
“আর এখন কি?”, বলে চেয়ে রইলাম নূরের দিকে। নূর কিছু বললোনা শুধু তার নিকষ কালো চোখ দিয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। হয়তো মনে মনে উত্তর দিচ্ছে।
আমি উত্তরের আসা না করে বললাম, “আমি জানি তুমি এসব ওয়াসিম আকরামের কথায় করেছো, সে তোমাকে তার হাতের পুতুল করে রেখেছে, তোমার সমপ্রেমি হওয়াটা সে একবারে মেনে নিতে পারেনি, আর লোক জানাজানির ভয়ে তোমাকে ডিভোর্স দেইনি, আর তোমাকে ভয় দেখিয়ে তার জঘন্য কাজ করে চলেছে, এসব সেইদিনই অনুমান করতে পেরেছি”।
নূরের চোখ জলে ভরে গেল, জল গেল বেয়ে পড়তে লাগলো, আমি হাত দিয়ে তার চোখের জল মুছতে যাবো এমন সময় করো হাত পিছন থেকে আমার দুটো চোখ ঢেকে বলে উঠলো, “সারপ্রাইজ”
আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম, এ গলা আমার বহুদিনের চেনা, যে গলার স্বর আমার মুখে হাসি আনার জন্য যথেষ্ট, যার গলার স্বর আমার শান্তি, যার গলার স্বরে কোনোদিন বিরক্ত থাকে না।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, “নাফিসা……!”

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন