সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Black Panther

Black Panther

Black Panther



Part 3
পরদিন সন্ধ্যা 5 টায়
হাত ঘড়িটা সময় বলছে 5 টা, প্যাকিং সব শেষ, সন্ধ্যা 6 টায় ফ্লাইট। আমি সব কিছু সঙ্গে নিয়ে নিলাম। আমার নকল পাসপোর্টে নাম দেওয়া হয়েছে রুজিনা খাতুন, বাবা আবদুল খান, এক্স ইন্ডিয়ান আর্মি, এবং মারা গেছেন, আমি ইন্ডিয়ান স্টীল কো. কোম্পানির সুপার ভাইজার । শেষবার পাসপোর্টে চোখ বুলিয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে সুটকেস টা বন্ধ করলাম। দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম, এক একটা মুহূর্ত যেনো একটা ঘণ্টার মতো লাগছে। অবশেষে 5.30 এর দিকে ফ্ল্যাটের দরজা লক করে ফ্ল্যাটের দিকে শেষবার তাকিয়ে একটা ট্যাক্সি থামিয়ে তাতে চেপে পড়লাম।
“ম্যাম আপ কাহা জায়েঙ্গে?”, জিজ্ঞেস করলো ট্যাক্সি ড্রাইভার।
“airport!”, সংক্ষেপে বলে জানলার দিকে চেয়ে রইলাম।
সঠিক সময়ে airport এ পৌঁছে গেলাম, ট্যাক্সি ভাড়া মিটিয়ে এগোলাম কাস্টম চেকিং এর দিকে। বাথরুমে গিয়ে বন্দুকটাকে সুটকেস থেকে বার করে কোমরে গুঁজে নিলাম, খানিকটা ভয় করতে লাগলো, যদি সিকিউরিটি চেকিং এ ধরা পড়ি, যদি চিফ ম্যানেজ করতে না পারে, তালগোল পাকানো মাথা নিয়ে আমি কাউন্টারের দিকে পা বাড়ালাম।
   টিকিট নিয়ে সিকিউরিটি চেকিং এর দিকে এগালাম তখন মনে বুকের মধ্যে কেউ হাতুড়ী পিটছে, সিকিউরিটি ম্যান আস্তে আস্তে চেকার মেশিন নিয়ে আমার সারা শরীর স্ক্যান করতে লাগলো, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে এই ঠান্ডার মধ্যে সেটা আস্তে আস্তে টের পেলাম। মেশিন টা কোমরের কাছে আসতেই লাল সংকেত দিল। এই রে এবার ধরা পরে গেলাম!
সিকিউরিটি বুদ্ধির পরিচয় পেলাম, সে সঙ্গে সঙ্গে মেশিনটা বন্ধ করে বললো “খারাপ হয়ে গেছে এটা”
আমি ভ্রু কুঁচকে তার মুখের দিকে তাকালাম, দেখি আমাদেরই আরেক এজেন্ট, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, “you can go ma’am”
আমি কিছু না বলে সোজা প্ল্যানের দিকে এগুলাম।
     প্ল্যান টেক অফ করলে জানলা দিকে তাকিয়ে মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখতে লাগলাম, ইস কত সুন্দর লাগছে, মনে হচ্ছে আমিও মেঘের সাঠে উড়তে পারবো, আমাকে ওই কাঁচের জানলা টা বাঁধা দিচ্ছে, বলছে, “না, তুমি পারোনা উড়তে, তোমার অধিকার নেই, তুমি এই জগতের নিস্কৃষ্ট প্রাণী”।
সত্যিই কি আমরা জগতের নিকৃষ্ট প্রাণী? না আমাদের মান আর হুস দুটোই আছে, তাহলে।
শুনেছি ঋষিরা বলেন মানুষ অন্যতম সকল প্রাণীজগতের মধ্যে, মানুষ প্রেমের প্রতীক, তাহলে কেন মানুষ আজ এত প্রেমকে প্রত্যেক গরম, ঘুরন্ত বুলেটের ছেঁকা দিয়ে রক্তর্ত করছে, কেনো বারুদের কড়া গন্ধ গোলাপের কোমলতা মলিন করছে, উত্তর তোমার কাছে, আমার কাছে? কারন আমরা চলছি ঘড়ির বিপরীত দিকে যার শেষ নেই কিন্তু শুরু।
সবপ্রকার চিন্তা ঠেলে নাফিসার কথা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। ফোন বের call করতে যাবো, এমন সময় পাশ থেকে এয়ার হস্টেজ বলল, “ম্যাম প্লিজ don’t use phone right now”
“ok”
“Thank you”, জানিয়ে এয়ার হস্তেজ চলে গেলো।
  পরদিন সকাল 7 টায়
এই একটু আগে নামলাম করাচী এয়ারপর্টে, এখানে R&AW এর আর এক এজেন্ট এর সঙ্গে দেখা হলো আগে থেকেই সব ঠিক করা ছিল, কোড নাম রণক। রণকের কাছে জানতে পারলাম মিসেস নূরজাহান এখন ওয়াসিম আকরামের সাথে থাকে না। মাসে মাসিক মাসোয়ারা নিয়ে আলাদা জায়গায় থাকে মিসেস নূরজাহান। আমারও তার বাড়ির আসেপাশে থাকার ব্যবস্থা করেছে R&AW। আমাকে রনক একটা গাড়ির দিকে নিয়ে গেল, গাড়িটার গায়ে উর্দুই পাকিস্তান লেখা আছে। গাড়িতে বসতে রনক গাড়ি জোরে ছুটিয়ে দিল। আমি আসে পাশের পরিবেশ দেখতে লাগলাম।l দেখে বুঝলাম পাকিস্তান বিজ্ঞানের অগ্রগতির ধারে পাশে যায়নি, অনেক জায়গায় ইলেকট্রিক নেই, নেই ফোনের টাওয়ার। আমার মনের ভাব ধরে রনক বললো, “ম্যাম এখানে এইরকম, খাবার নেই জল নেই পরিষ্কার”
“ IsI খবর রেখেছে আপনি আসছেন, ওই দেখুন পিছনে একটা কালো জীপ লেগেছ, প্রত্যেক ভারতীয় আসলেই ISI পেছনে ISI এজেন্টদের লেলিয়ে দিয়ে থাকে”, বললো রনক।
আমি লকিং গ্লাসে দেখলাম সত্যিই কালো জীপ সমান দূরত্ব রেখে আমাদের গাড়ির দিকে ধেয়ে আসছে।
কিছুক্ষন পর গাড়িটা পাসিং লাইট অন করলে রনক রাস্তা ছেড়ে দিল, গাড়িটা জোরে আমাদের ওভার টেক করে আমাদের গাড়ির সামনে দাঁড়ালো, সুতরাং আমাদের ব্রেক কষতে হল। আমি দেখলাম, গাড়ি থেকে চারজন AK-47 রাইফেল নিয়ে মিলিটারি ম্যান আমাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে এলো।
রনক বললো, “ম্যাম আমি সামলে নেব আপনি কিছু করবেন না”
চারজন এসে আমাদের গাড়ির সামনে দাড়ালো, ড্রাইভারের দিকে জনলাটাই টোকা দিল। রনক আস্তে আস্তে কাঁচটা নামালো,
একজন উর্দুতে প্রশ্ন করলো, “ম্যাম আপনি রুজিনা খাতুন?, আমরা পাকিস্তানি গভর্নমেন্ট থেকে আপনার সেফটির নিচ্ছি, ম্যাম আপনার পাসপোর্টটা আমাদের একবার দেখান”
আমি কথা না বাড়িয়ে পাসপোর্টটা দিলাম, তারা দেখে নিজেদের মধ্যে কিসব কথাবার্তা বলে আমাকে পাসপোর্টটা ফেরত দিল।
আরেকজন বললো, “ম্যাম আপনি আমাদের গাড়িতে আসুন আপনার থাকার জায়গা ইন্ডিয়ান আম্বাসি থেকে ঠিক করা হয়েছে, সেখানে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব আমাদের, লাগেজ আপনার ড্রাইভারের গাড়িতে থাকুক”।
আমি একবার রণকের দিকে তাকিয়ে আমাদের গাড়ি থেকে নেমে ওদের জীপে উঠলাম। আমার মনের মধ্যে অনেক কথা ঘোরপাক খেতে লাগলো, এরা সত্যিই কি ISI agent নাকি পাকিস্তান গভর্নমেন্ট ভালো সাজছে। গাড়ি আস্তে আস্তে সময়ের সাথে আমার থাকার জায়গায় এসে থামলো, দেখলাম বাংলো টাইপের ঘরে আমার থাকার ব্যাবস্থা করেছে R&AW, আমার থাকার জায়গার পাশে দেখলাম আর একটা বড় বাড়ি তার ছাদে একটা মেয়ে বোরখা পরে দাড়িয়ে আছে, আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই সে ছাদের কিনারা থেকে সরে গেলো। মিলিটারিরা আমার লাগেজ বাড়ির ভেতরে রেখে বললো, “ম্যাম আপনার রুম রেডি আপনি ভেতরে যেতে পারেন, আর হ্যা দুজন কনস্টেবল আপনার বাড়ি পাহারায় সব সময় থাকবে, আমরা আসি এখন”
মিলিটারিরা চলে গেলো, আমি আর রণক বাড়ির ভেতরে দিকে পা বাড়ালাম, ঢোকার আগে আবার পাশের বাড়ির ছাদের দিকে তাকালাম দেখি ছায়ামূর্তি আবার কিনারায় দাড়িয়ে আছে।
রনকের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, রনক একগাল হাসি এনে বললো, “মিসেস নূরজাহান!”
আমিও জোরে হেসে দিলাম।

মন্তব্যসমূহ